দুবরাজপুর বাজার এলাকায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখনে হাত লাগিয়েছেন দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা। নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শনিবার রাতে বীরভূম কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। ‘সদ্য প্রাক্তন’ আইপিএস আধিকারিক দেবাশিস ধরের নাম ঘোষণা হতেই রবিবার থেকে তাঁর সমর্থনে দেওয়াল লেখা শুরু হয়েছে। তবে বিজেপি শিবির সূত্রেই খবর, ভোট অঙ্কের হিসেব কষেই দেখা যাচ্ছে, শাসক দলের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইটা মোটেও সহজ হবে না। সেই মতোই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বিজেপি সূত্রে।
দেওয়ালে প্রার্থীর নামের জায়গা ফাঁকা রেখেই এত দিন অপেক্ষায় ছিলেন বীরভূম কেন্দ্রের বিজেপি নেতাকর্মীরা। রবিবার সকাল থেকেই দেবাশিস ধরের নামে দেওয়াল লেখা শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি এ দিন দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহাকেও দেওয়াল লিখতে দেখা যায়। তবে অবশেষে প্রার্থী ঘোষণার ফলে কর্মী-সমর্থকেরা চাঙ্গা হলেও বিজেপি নেতাদের একাংশ আড়ালে মানছেন, এই কেন্দ্রে ভাল ফল করতে একাধিক সমীকরণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। তার অন্যতম দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় ও আন্তরিকতা।
বিজেপির একটা সূত্রে দাবি, প্রকাশ্যে উচ্ছ্বাস দেখালেও যাঁরা প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন বা নিজেদের যোগ্য মনে করছিলেন তাঁদের অবশ্যই মন খারাপ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘চাপিয়ে’ দেওয়া প্রার্থীর হয়ে তাঁরা কতটা আন্তরিক হবেন সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। তবে দলের আরেকটা অংশের মত, দলের জেলা নেতাদের কয়েক জন প্রার্থী হওয়ার জন্য যে ভাবে উঠেপড়ে লেগেছিলেন, তাঁদের এক জনকে প্রার্থী করলে অন্য অংশ মুখ ঘুরিয়ে নিত। এক নেতার কথায়, ‘‘সে দিক থেকে দেখলে এটা ভালই হল। মূল শর্ত একটাই, গোটা লোকসভা এলাকার নেতাকর্মীদের ভোটের কাজে লাগাতে হবে।’’
বিজেপি সূত্রে দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দুর্বল জায়গাগুলিকে শক্তিশালী করায় জোর দেওয়া হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে তিনবার জয়ী তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন গত লোকসভা নির্বাচনেই। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬,৬৫, ০৭৭। বিজেপির দুধকুমার মণ্ডল ৫,৬৫,১৫৩টি ভোট পান।
বিজেপি নেতাদের দাবি, তাঁদের পক্ষে ইতিবাচক দিক হল শতাব্দী জয়ী হলেও বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া এবং রামপুরহাট— এই চারটিতেই এগিয়ে ছিল বিজেপি। হারতে হয়েছিল হাঁসন, মুরারই ও নলহাটি— এই তিনটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বিধানসভায় তৃণমূল বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায়।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি চারটি বিধানসভায় এগিয়ে ছিল ৩৭১৮৩টি ভোটে। সেখানে শুধু মুরারই বিধানসভায় শতাব্দী রায় এগিয়ে ছিলেন ৬৯৪০৩ ভোটে। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে অবশ্য বীরভূম লোকসভার অন্তর্গত একমাত্র দুবরাজপুর ছাড়া বাকি সব বিধানসভা এলাকাতেই পিছিয়ে ছিল বিজেপি। দলেরই এক নেতা মানছেন, ‘‘২০১৯ সালে প্রবল মোদী হাওয়া ছিল। সঙ্গে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার যন্ত্রণা ছিল। এ বারে সেই খামতি মেটানো যাবে কী ভাবে এই প্রশ্নটাই বড় করে দেখা দিয়েছে।’’
বিজেপির এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘রাস্তা একটাই। যে যে বিধানসভায় আমরা এগিয়ে ছিলাম সেই লিড বাড়িয়ে নেওয়া, অন্য দিকে যেখানে পিছিয়ে ছিলাম সেই ব্যবধান কমিয়ে ফেলা।’’ তবে সেই নেতা এটাও মানছেন তা করতে হলে দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে মাঠে নামতে হবে। তা না হলে কোন জাদুবলে এত ভোট বিজেপির অনুকূলে আনা যাবে তার ব্যাখ্যা মেলেনি। অন্য দিকে, রবিবার নলহাটিতে প্রচারের সময় জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে শতাব্দী রায়কে। বলছেন, ‘‘জেতার বিষয়ে ২০০ শতাংশ নিশ্চিত।’’
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূম কেন্দ্রের প্রার্থী দেবাশিস ধর সম্ভবত সোমবার বা মঙ্গলবার জেলায় আসবেন। পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করবেন তিনি। বিজেপি সূত্রে দাবি, ইতিমধ্যেই জেলার নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথাবার্তাও বলতে শুরু করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই বিজেপির নির্বাচন কমিটিও তৈরি হয়েছে। তাতে পুরনো দুই জেলা সভাপতি আছেন। তাঁদের অন্যতম দুধকুমার মণ্ডলও প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন বলে দল সূত্রে খবর। তিনি অবশ্য বলছেন, ‘‘দল যে ভাবে কাজ লাগাতে চাইবে, আমি সে ভাবেই কাজ করব। দলের নির্দেশই শেষ কথা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy