— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
একই ক্লাবের সদস্যদের বৈঠক হচ্ছে দু’টি ভাগে। একটি দল এক সম্পাদক, সভাপতিকে নিয়ে বৈঠক করছে। অন্য দল বৈঠকে বসছে আলাদা সম্পাদক, সভাপতির সঙ্গে। দু’দলের মধ্যে মাঝেমধ্যেই চেয়ার ছোড়াছুড়ি হচ্ছে। স্থানীয় এক নেতা পরিস্থিতি সামলাতে সম্প্রতি ক্লাবে বৈঠক করতে গেলে অবস্থা ঘোরালো হয়। পুলিশ-পিকেট বসাতে হয় ক্লাবের সামনে।
বেলেঘাটার একটি ক্লাবের এই ঘটনার কথা শুনিয়ে সেখানকার বাসিন্দারা বলেন, ‘‘আগে এমন ছিল না। নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই এটা শুরু হয়েছে।’’ ওই ব্যক্তি জানান, যিনি এত দিন সভাপতি ছিলেন, তিনি এক বৈঠকে বলেন, ‘‘ভোট আসছে। রাজ্য সরকারের থেকে আমরা কিন্তু কম সাহায্য পাইনি।’’ যুক্তি হিসাবে জানান, অনুদানের টাকায় টিনের চালার ক্লাবঘর এখন দোতলা। জিম খুলে স্থায়ী আয় হচ্ছে। ফের টাকা পেলে একটি তল বাড়িয়ে অনুষ্ঠানবাড়ি হিসাবে ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। সভাপতির বক্তব্য ছিল, কৃতজ্ঞতা থেকে রাজ্য সরকারের প্রতি সমর্থন দেখানো উচিত। ওই বৈঠকেই অন্য দল চিৎকার শুরু করে। তাঁদের এক জন বলে ওঠেন, ‘‘আপনাকে মানি না। ও সব দিন গিয়েছে। এ বার আসল পরিবর্তন আসবে।’’
গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে রাজ্যে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। যুযুধান দুই দলের আসনের পার্থক্য চারটি। গত বারই লোকসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনায় বসে তৃণমূলের অন্দরে চর্চার বিষয় ছিল, ক্লাবগুলিকে দেওয়া খয়রাতি ভোটবাক্সে ‘আনুগত্য’ লাভে কি আদৌ কার্যকর হয়েছে?
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই রাজ্যের ক্লাবগুলিকে ঢালাও অর্থসাহায্য দেওয়া শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রের দাবি, তৃণমূলের বিধায়ক ও পুরপ্রতিনিধিদের বাছাই করা সেই সব ক্লাবকে টাকা দিতেই ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারের প্রায় ২২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম দফায় দু’লক্ষ এবং আরও তিন দফায় এক লক্ষ করে মোট পাঁচ লক্ষ টাকা পেয়েছিল কলকাতা পুর এলাকার প্রায় ১০৫০টি ক্লাবের প্রতিটি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘ক্লাবের ছেলেরাই আমাদের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে।’’
তবে, ২০২৩ সালে পুজোর অনুদান বাড়ানো ছাড়া আসন্ন নির্বাচনের
আগে নতুন অনুদানের ঘোষণা করা না হলেও চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে, ভোটের বাজারে ক্লাবগুলি কী ভূমিকা পালন করবে? এক পক্ষ মনে করছে, ক্লাবগুলির পাশে রাজ্য যে ভাবে দাঁড়িয়েছে, সেটা মনে রেখে সদস্যেরা ভোটে কাঙ্ক্ষিত ফুল ফোটাবেন। অন্য পক্ষের মত, অনুদানের টাকায় আনুগত্যের মেয়াদ শেষ। তাই ভোট-বাক্সে অন্য ফুল ফুটতে পারে। তবে একটি বিষয়ে পাড়ায় পাড়ায় অনেকেই একমত, বহু ক্লাবে বিভাজনের কারণ অনুদান। ক্লাবের দখল নিয়েও দু’পক্ষে লড়াই চলছে।
কোথাও পছন্দের প্রার্থীর প্রচারসূচি থাকলে সেখানে দলবল নিয়ে যাচ্ছেন ক্লাবের এক দাদা। অন্য পক্ষ আবার সদস্যদের সেখানে না যাওয়ার ফরমান জারি করছে। এমনও জানা যাচ্ছে, ভোটের আগে বিরোধীদের কাকে কাকে নরমে-গরমে রাখতে হবে, ক্লাবের দাদাদের নির্দেশে সেই তালিকাও হচ্ছে। অভিযোগ, ক্লাবের ছেলেদেরই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তালিকায় থাকা ব্যক্তি যাতে প্রচারে ও ভোটে বাড়ি থেকে না বেরোন। ভোটের দিন ক্লাবের দাদারা কোথায়, কত লোক নিয়ে যাবেন, তা-ও ঠিক করা হচ্ছে।
আলিপুরের এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘প্রচার কিংবা বাড়িতে ভোটের
কাগজ বিলি করেন ক্লাবের ছেলেরাই। ফলে ক্লাব হাতে থাকলেই নেতার বাহুবল থাকে। মাথায় নেতার হাত থাকলে ক্লাবের ছেলেরাও পাড়ায় নির্মাণের বরাত পান, কর্মসূচির নামে মোটা চাঁদা তোলার কারবার চালিয়ে গেলেও পুলিশি ঝক্কি হয় না। দাদার বিরুদ্ধে গেলে ক্লাবে তো দূর, এলাকায় টেকাও কঠিন।’’
জোড়াবাগানের একটি ক্লাবের প্রধান বললেন, ‘‘প্রতি বারই ছেলেরা এলাকার ভোট সামলায়। বিধায়ক, পুরপ্রতিনিধি বলে না দিলে তো অনুদান মেলে না। তাই যাঁরা পাশে ছিলেন, তাঁদের হয়ে ক্লাবের ছেলেরা প্রচারে নামে। এতে অন্যায় কী? তবে কেউ কেউ বেইমান হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy