প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
ধর্মের নামে, সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে ভোট চাওয়ার অভিযোগে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জমা পড়ল। তাঁর বিরুদ্ধে সামাজিক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে দিল্লির পুলিশ কমিশনারের কাছেও অভিযোগ জমা পড়ল। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের দাবিও উঠল। নির্বাচন কমিশনের মুখে অবশ্য এখনও কুলুপ।
রবিবার নরেন্দ্র মোদী রাজস্থানে গিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন, কংগ্রেস তার ইস্তাহারে দেশের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে নিজে মোদীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছেন। তিনি সরাসরি মোদীকেই জিজ্ঞেস করতে চান, কংগ্রেসের ইস্তাহারে কোথায় এই সব কথা লেখা রয়েছে? পাশাপাশি গোটা দেশের কংগ্রেস কর্মীদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে দলের ইস্তাহার পাঠানোর পরিকল্পনাও নিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। খড়্গে অভিযোগ তুলেছেন, বিভাজনের রাজনীতি করতে মোদী মিথ্যাচার করছেন। রাহুল গান্ধী আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর মিথ্যের কারবার অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।’
বিরোধীদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী শুধু মিথ্যাচার করেননি। মুসলিমদের নাম করে তাঁরা বেশি সন্তানের জন্ম দেন বলে দাবি করেছেন। তাঁদের অনুপ্রবেশকারী বলেছেন। হিন্দু মহিলাদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হবে বলে আতঙ্ক তৈরি করতে চেয়েছেন। কংগ্রেস নেতাদের কথায়, ২০০২ সালে গুজরাতের হিংসার পরে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, যে সব ত্রাণ শিবিরে কাঁড়ি কাঁড়ি বাচ্চার জন্ম হচ্ছে, সেখানে ত্রাণের টাকা পাঠানো উচিত কি না! বাইশ বছর পরে নরেন্দ্র মোদী আবার সেই অবতারে ফিরেছেন। এনডিএ-র শরিকদের সকলেও মোদীর কথা ভাল ভাবে নেননি। শিরোমণি অকালি দলের নেতা বিক্রম সিংহ মাঝিথিয়ার মন্তব্য, ‘‘আজ ওঁদের (মুসলমান) নিশানা করা হচ্ছে। আগামিকাল আমাদের (শিখ) নিশানা করা হবে।’’
নরেন্দ্র মোদীর দাবি ছিল, কংগ্রেস ইস্তাহারে মুসলমানদের মধ্যে দেশের সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার আগে কার কত সম্পদ রয়েছে, তা সমীক্ষা করার কথা বলেছে। মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ও বলেছিলেন, দেশের সম্পদে প্রথম অধিকার মুসলিমদের। এখন কংগ্রেস শহুরে নকশালদের চিন্তাভাবনা নিয়ে একই কাজ করছে। হিন্দুদের সম্পত্তি, গয়না মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে চাইছে।
এর পরে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির নেতৃত্বে কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল আজ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী সুবক্তা। কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের গরিমা নষ্ট করেছেন।’’ সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট দিল্লির মন্দির মার্গ থানায় গিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সামাজিক বিদ্বেষ ছড়ানো, জাতীয় ঐক্যে ভাঙন ধরানোর অভিযোগ জানান। থানা এফআইআর নিতে অস্বীকার করায় তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ জানান। সীতারাম ইয়েচুরি মোদীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার পরে তাঁর পক্ষে হাওয়া নেই বুঝে মোদী দ্বিতীয় দফার আগে একেবারে খোলাখুলি সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাস্তা নিয়েছেন। সেটা করতে গিয়ে তিনি এই প্রথম সরাসরি মুসলমানদের নাম করে হিন্দুদের মনে আতঙ্ক তৈরি করতে চেয়েছেন। তিনি জন প্রতিনিধিত্ব আইন ভেঙেছেন, আদর্শ আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন।
কংগ্রেসের ইস্তাহার কমিটির চেয়ারম্যান পি চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘আর কোনও প্রধানমন্ত্রী এমন বেপরোয়া মন্তব্য করেননি। বিজেপি কি দেখাতে পারবে, কংগ্রেসের ইস্তাহারে কোথায় বলা আছে, কংগ্রেস সোনা-গয়না, সম্পত্তি মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে? কোথায় কংগ্রেস মানুষের সোনাগয়না, জমিবাড়ির হিসেব করার কথা বলেছে?” বিজেপি নেতা অমিত মালবীয় কংগ্রেসের ইস্তাহার তুলে ধরে বলেছেন, কংগ্রেস আর্থ-সামাজিক জাতগণনার কথা বলেছে। মুসলিমদের আর্থিক ক্ষমতায়নের কথা বলেছে। সংখ্যালঘুদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরিতে সমান সুযোগের কথা বলেছে। মুসলমানদের মধ্যে হিন্দুদের সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার প্রমাণ? মালবীয় সেটা দেখাতে পারেননি। তাঁর অনুমান, ‘‘কংগ্রেস হয়তো সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার আগে তার সমীক্ষার কথা বলছে।’’
কংগ্রেসের বক্তব্য, ইস্তাহারে আর্থসামাজিক জাতগণনার কথা বলা হয়েছে। তাতে দেখা হবে, দলিত, আদিবাসী, ওবিসিরা আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে কি না। কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি, সেই অনুযায়ী ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে। চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৬ সালে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠকে বলেছিলেন, দলিত, আদিবাসী, ওবিসি, সংখ্যালঘু, মহিলাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের সম্পদে প্রান্তিক মানুষের প্রথম অধিকার। তিনি কখনও মুসলিমদের দেশের সম্পদে প্রথম অধিকারের কথা বলেননি। সে সময়েও বিজেপি এ নিয়ে বিতর্ক খাড়া করতে চেয়েছিল। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর তার ব্যাখ্যাও দিয়েছিল। এত বছর পরে নরেন্দ্র মোদী আবার তাঁর পূর্বসুরির মন্তব্য
বিকৃত করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy