Three years of Russia-Ukraine War

ইউক্রেন যুদ্ধের তৃতীয় বর্ষপূর্তি, ‘ট্রাম্প’-কার্ডে ভর করে কি সুবিধাজনক অবস্থানে পুতিন?

ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে ওয়াশিংটন-কিভ দূরত্ব স্পষ্ট। জো বাইডেনের জমানায় ইউক্রেনকে যে দেদার সামরিক সাহায্য আমেরিকা দিয়ে এসেছে, তাতেও ভাটার টান স্পষ্ট।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:০২
Three years of Russian invasion on Ukraine

(বাঁ দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভলোদিমির জ়েলেনস্কি, ভ্লাদিমির পুতিন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। সকাল ৬টায় সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় কিভের বিরুদ্ধে ‘সামরিক অভিযানের’ কথা ঘোষণা করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ইউক্রেনের ‘নির্দিষ্ট ৭০টি লক্ষ্যে’ ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান হামলা চালিয়েছিল রুশ বাহিনী। পরবর্তী ধাপে শুরু হয়েছিল স্থলপথে অভিযানও।

Advertisement

কিন্তু এর পরে পরাক্রমশালী রুশ সেনার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যে ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তা দেখে চমকে গিয়েছিলেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। যুদ্ধে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে পশ্চিমি দুনিয়ার সমর্থনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির বাহিনী যে ভাবে রাশিয়াকে নাস্তানাবুদ করেছিল, তাতে বিশ্বের সামরিক ভারসাম্যের ‘কাঁটা’ নড়ে যেতে পারে বলেও আঁচ করা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতি বলছে ‘অন্য কথা’।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে ওয়াশিংটন-কিভ দূরত্ব স্পষ্ট। জো বাইডেনের জমানায় ইউক্রেনকে যে দেদার সামরিক সাহায্য আমেরিকা দিয়ে এসেছে, তাতেও ভাটার টান স্পষ্ট। পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাসের (পূর্ব ইউক্রেনের ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলকে একত্রে এই নামে ডাকা হয়) বিস্তীর্ণ অঞ্চল-সহ পাঁচ ভাগের এক ভাগ ভূখণ্ড এখন রাশিয়ার দখলে। ক্রুস্ক অঞ্চলে মরিয়া প্রতি-আক্রমণ চালাতে গিয়ে রুশ সেনার প্রত্যাঘাতে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইউক্রেন সেনার।

এই পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটনের ভরসায় না থেকে সক্রিয় ভাবে কিভের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে সামরিক জোট নেটোর ইউরোপীয় সদস্য রাষ্ট্রগুলি। গত সপ্তাহে ব্রিটেন, ফ্রান্স-সহ ইউরোপের ন’টি দেশের ১০ হাজারের বেশি সেনা রোমানিয়ার মাটিতে শুরু করেছে সর্বাঙ্গীণ যুদ্ধের মহড়া। ইউক্রেন সীমান্তের মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া ওই মহড়ার পোশাকি নাম ‘স্টেডফাস্ট ডার্ট ২০২৫’। কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে মোতায়েন রুশ নৌবহরকে চাপে ফেলতে গ্রিসকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মহড়ায়। কিন্তু তাতে রুশ ফৌজের অগ্রগতি রোখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এই আবহে দীর্ঘ দু’বছরের অসম যুদ্ধে চমকপ্রদ প্রতিরোধের উদাহরণ তৈরি করা ইউক্রেন সেনা এখন অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জামের অভাবে ভুগতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বেশি করে দেখা দিয়েছে গোলাবারুদের অভাব। প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কির মুখে একাধিক বার সেই অভাবের কথা উঠে এসেছে। তা ছাড়া ঘাটতি রয়েছে জনবলেরও। এই পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে আর কত দিন লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। ট্রাম্প নিজে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির কথা বললেও গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রিয়াধে আমেরিকা-রুশ বৈঠকে ইউক্রেনের অনুপস্থিতি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

দ্বিমুখী চাপের সামনে ইতিমধ্যেই সুর নরম করেছেন জ়েলেনস্কি। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেন সামরিক জোট নেটোর সদস্য হলে প্রেসিডেন্টপদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তিনি বলেন, “ইউক্রেনে শান্তির জন্য যদি আপনি চান যে আমি পদত্যাগ করি, তবে আমি তার জন্য প্রস্তুত।” একই সঙ্গে জ়েলেনস্কির সংযোজন, “আমি এটা নেটোর জন্য করতে পারি।” ঘটনাচক্রে, যে অভিযোগগুলি সামনে এনে পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সূচনা করেছিলেন, তার অন্যতম হল নেটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য জ়েলেনস্কির তৎপরতা। ওই সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্পের প্রতিও বার্তা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। জানিয়েছেন, তিনি কেবল রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবেই ট্রাম্পকে দেখতে চান না। বরং আরও একটু বেশি কিছু চান আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবে এখনও কোনও জবাব আসেনি ওয়াশিংটন থেকে। সোমবার জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, যুদ্ধে ইতি টানতে এবং বন্দি বিনিময়ের জন্য তিনি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত।

Advertisement
আরও পড়ুন