বিদ্রোহীদের দখলে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস, পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। —ফাইল চিত্র।
সিরিয়ায় পতনের মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকার। বিদ্রোহীরা রবিবার সকালে রাজধানী দামাস্কাসে ঢুকে পড়েছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর গন্তব্য অজানা। তবে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকেরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বিমানে উঠেছেন। কোথায় যাচ্ছেন, তা প্রকাশ করা হয়নি।
সিরিয়ার দুই বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী রবিবার সকালে দামাস্কাসে ঢুকে পড়ে। ঘিরে ফেলা হয় রাজধানী শহর। পিছু হটছে সেনাবাহিনীও। রবিবার সকালে দামাস্কাসে সরকারি কোনও প্রতিনিধি বা বাহিনীকে দেখা যায়নি। বিনা বাধায় রাজধানী দখল করে নিয়েছেন বিদ্রোহীরা। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি সরকার। ব্রিটেনে সিরিয়ার পর্যবেক্ষণাগার থেকে জানানো হয়েছে, সে দেশের বিমানবন্দর থেকেও সেনাবাহিনী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের আগমনের খবর পেয়ে তাঁরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
বিদ্রোহের ফলে দেশ জুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দামাস্কাসে রবিবার সকাল থেকে গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বাসিন্দারা ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না। প্রেসিডেন্ট আসাদের সমর্থকেরা সরকার পতনের সম্ভাবনায় রাজধানী ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন।
গত কয়েক দিন ধরেই সিরিয়ার একের পর এক শহর দখল করেছেন বিদ্রোহীরা। ধীরে ধীরে তাঁরা এগিয়েছেন দামাস্কাসের দিকে। রবিবার সকালে রাজধানীও বিদ্রোহীদের দখলে। সিরিয়ায় গত ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিয়েছিল আমেরিকা। পরবর্তী সময়ে আইএসের বাড়বাড়ন্ত রুখতে নেটো বাহিনীও হামলা চালিয়েছিল।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, গত কয়েক মাসে ইজ়রায়েলি বিমানহানায় আসাদ বাহিনীর অবস্থান বেশ দুর্বল হয়েছে। তাই সুযোগ বুঝে দামাস্কাসের দিকে অগ্রসর হয়েছেন বিদ্রোহীরা। আসাদের কাছে অবশ্য রাশিয়া এবং ইরানের সাহায্য রয়েছে। ইরাক থেকে শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীও সিরিয়া সেনার সাহায্যে সীমান্ত পেরিয়েছে বলে পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু রাজধানী রক্ষা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন আসাদ। বিদ্রোহীদের আগ্রাসনের মুখে আপাতত তাঁকে পিছু হটতে হল।
সিরিয়ার টালমাটাল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সে দেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে নয়াদিল্লি। সুযোগ থাকলে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে বলা হয়েছে সিরিয়ার প্রবাসীদের। ‘প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বেরোনো’, ‘সাবধানে চলাফেরা করা’ এবং ‘নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’র কথাও বলা হয়েছে।