দামাস্কাস দখল করতে এগোচ্ছেন বিদ্রোহীরা। ছবি: পিটিআই।
সিরিয়ায় কি শেষ হতে চলেছে বাশার আল আসাদের শাসনকাল? সে দেশের বিদ্রোহী দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী ক্রমশ এগোচ্ছে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের দিকে। তাদের দাবি, তারা সিরিয়ার রাজধানী ঘেরাওয়ের কাজ শুরু করেছে। শনিবার বিদ্রোহীরা ঘোষণা করেন, ‘‘দামাস্কাস আমাদের অপেক্ষায় রয়েছে।’’
বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস-এর নেতা আবদেল ঘানি বলেন, ‘‘দামাস্কাস দখলের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে আমাদের বাহিনী।’’ তাঁর দাবি, রাজধানী থেকে বিদ্রোহীরা আর মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছেন। আবদেল জানান, সিরিয়ার সেনা রাজধানী ছাড়তে নারাজ। তবে বিদ্রোহীরা শীঘ্রই রাজধানী দখল করবেন।
গত কয়েক দিনে সিরিয়ার একের পর এক শহর দখল করছেন বিদ্রোহীরা। ধীরে ধীরে এগোচ্ছেন রাজধানীর দিকে। সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো এখন বিদ্রোহীদের দখলে। শনিবার বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, বিদ্রোহীরা অগ্রসর হওয়ায় পিছু হটছে সিরিয়ার সেনা। যদিও সেই দাবি নস্যাৎ করেছে সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। গত এক সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ এইচটিএস নেতা আবু মহম্মদ আল-জুলানির বাহিনী দখল করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সামরিক কৌশলগত অবস্থানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হামা দখলের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের হাতে এসেছে আর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দারা। এইচটিএসের পরবর্তী নিশানা রাজধানী দামাস্কাসমুখী সড়কের সংযোগরক্ষাকারী আর এক শহর হোমস। যা দখল করতে পারলেই এইটিএস-জইশ বাহিনীর যোদ্ধাদের হাতে বাসাদ সরকারের পতন অনিবার্য বলে সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।
গত ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। সেখানে যুযুধান বেশ কয়েকটি পক্ষ। ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিয়েছিল আমেরিকা। পরবর্তী সময়ে আইএসের বাড়বাড়ন্ত রুখতে নেটো বাহিনী হামলা চালিয়েছিল। সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, গত কয়েক মাসে ইজ়রায়েলি বিমানহানায় আসাদ বাহিনীর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই দামাস্কাস রক্ষার জন্য তাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।
অন্য দিকে, আসাদকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে রাশিয়া এবং ইরান। ইরাক থেকে শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীও সিরিয়া সেনার সাহায্যে সীমান্ত পেরিয়েছে বলে পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ইরানের বাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় ঢুকে পড়েছে। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ইরান এবং রাশিয়ার সাহায্য পেলেও বিদ্রোহীদের আগ্রাসনের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হতে পারেন আসাদ।
গৃহযুদ্ধের আবহে সেখানকার ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তিত ভারত সরকার। সিরিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের জন্য শুক্রবার মধ্যরাতে নির্দেশিকা জারি করেছে সাউথ ব্লক। সেখানে ‘প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না বেরোনো’, ‘সাবধানে চলাফেরা করা’ এবং ‘নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’র কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সুযোগ থাকলে সিরিয়া ছাড়ার বার্তাও দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।