Syria War

আরও একটি শহর দখল! রাজধানী দামাস্কাসের পথে বিদ্রোহীরা, সিরিয়ায় কি পতনের মুখে আসাদ-রাজ

আসাদ সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উত্তর ইরাকে ‘সক্রিয়’ হয়েছে সংখ্যালঘু কুর্দদের মিলিশিয়া বাহিনী ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স’ (এসডিএফ)।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:১৪
Syrian Army have lost control of Daraa city, big blow for President Bashar al-Assad

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। —ফাইল ছবি।

‘আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত হামলা’। এক সপ্তাহ আগে দুই বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী সে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পোয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীকে ঝটিতি অভিযানে কোণঠাসা করে ফেলায় এমনটাই প্রতিক্রিয়া ছিল পশ্চিম এশিয়ায়।

Advertisement

এর পর গত এক সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ এইচটিএস নেতা আবু মহম্মদ আল-জুলানির বাহিনী দখল করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সামরিক কৌশলগত অবস্থানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হামা দখলের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের হাতে এসেছে আর এক গুরুত্বপূর্ণ শহর দারা। যে শহর প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্মস্থান। এইচটিএসের পরবর্তী নিশানা রাজধানী দামাস্কাসমুখী সড়কের সংযোগরক্ষাকারী আর এক শহর হোমস। যা দখল করতে পারলেই এইটিএস-জইশ বাহিনীর যোদ্ধাদের হাতে বাসাদ সরকারের পতন অনিবার্য বলে সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।

আসাদ সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উত্তর ইরাকে ‘সক্রিয়’ হয়েছে সংখ্যালঘু কুর্দদের মিলিশিয়া বাহিনী ‘সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স’ (এসডিএফ)। আসাদ ফৌজের ছেড়ে যাওয়া কিছু অঞ্চল ইতিমধ্যেই তারা দখল করেছে। তুরস্ক সমর্থিত ‘সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ (এসএনএ)-র সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের খবর এসেছে। মধ্য ও পশ্চিম সিরিয়ায় ইসলামি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আইএস এবং দক্ষিণ সিরিয়ায় আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার মদতপুষ্ট ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র নতুন করে তৎপরতারও খবর মিলেছে শনিবার।

প্রসঙ্গত, এইচটিএস-এর আগে নাম ছিল নুসরা ফ্রন্ট। আমেরিকা, রাশিয়া -সহ আরও বেশ কিছু দেশ এদের জঙ্গি গোষ্ঠী বলে চিহ্নিত করেছে। তুরস্কের মদতেপুষ্ট আসাদ-বিরোধী বাহিনী ‘সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ (এসএনএ)-র সহযোগী গোষ্ঠী হিসেবেই এই সশস্ত্র বাহিনীর উত্থান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জুলানি সেই সম্পর্ক ভেঙে দেন। অন্য দিকে, ‘জইশ আল-ইজ্জা’র সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ রয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের। যদিও একদা কট্টরপন্থী নেতা জুলানি পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে সহিষ্ণুতার বার্তা দিতে তৎপর। আসাদ-সেনার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আলেপ্পোর মেয়র পদে তিনি নিয়োগ করেছেন সংখ্যালঘু এক ক্যাথলিক খ্রিস্টানকে!

গত ১৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়। সেখানে যুযুধান বেশ কয়েকটি পক্ষ। ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে মদত দিয়েছিল আমেরিকা। পরবর্তী সময়ে আইএসের বাড়বাড়ন্ত রুখতে নেটো বাহিনী হামলা চালিয়েছিল। সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, গত কয়েক মাসে ইজ়রায়েলি বিমানহানায় আসাদ বাহিনীর অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই দামাস্কাস রক্ষার জন্য তাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া এবং ইরানের সাহায্য পেলেও তা বিদ্রোহীদের ঠেকানোর পক্ষে অপ্রতুল বলেই মনে করা হচ্ছে।

২০১৫-১৬-য় ফ্রি সিরিয়ান আর্মি এবং এসএনএ-র হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন আসাদ। সে সময় রুশ সেনার পাশাপাশি তাঁর গদিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল লেবাননে সক্রিয় ইরানের মদতপুষ্ট শিয়া গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা এবং তাদের সহযোগী ইরানের মিলিশিয়া বাহিনী ইমাম হুসেন ব্রিগেডে। পুতিনের সেনা ও বিমানবহরের বড় অংশই ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত। গত কয়েক মাসের ধারাবাহিক ইজ়রায়েলি হানায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে হিজ়বুল্লা। ইমাম হুসেন ব্রিগেডের বড় অংশও লেবাননে ঘাঁটি গেড়ে ইজ়রায়েলি আগ্রাসন ঠেকাতে ব্যস্ত। তাই সুবিধা হয়েছে আসাদ-বিরোধী জোটের।

Advertisement
আরও পড়ুন