পাকিস্তানে একাধিক নাশকতায় নাম জড়িয়েছে আফগান জনগোষ্ঠীর। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
উত্তেজনার পারদ চড়ছিল বেশ কয়েক মাস ধরেই। এ বার প্রকাশ্যে চলে এল ইসলামাবাদ-কাবুল সংঘাত। প্রায় ১৭ লক্ষ ৩০ হাজার আফগান শরণার্থীকে আগামী নভেম্বরের মধ্যে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল পাকিস্তান সরকার। এই ঘটনার জেরে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাত নতুন মোড় নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পাক সরকারের তরফে বুধবার জারি করা নির্দেশিকায় হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, ওই সময়সীমার মধ্যে যদি অবৈধ ভাবে পাকিস্তানে বসবাসকারীরা স্বেচ্ছায় চলে না যান, তা হলে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে।
পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বুধবার বলেন, ‘‘পাকিস্তানের মাটিতে অবৈধ ভাবে বসবাসকারীদের কোনও জায়গা হবে না।’’ আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে মূলত পাশতুন জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিল। দু’দশক আগে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা অভিযান শুরুর পরেও কয়েক লক্ষ আফগান নাগরিক প্রাণভয়ে পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। মূলত পাক-আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান প্রদেশে তাঁদের বসবাস।
পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানাচ্ছে, মূলত দু’টি কারণে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসলামাবাদ। প্রথমত, দেশের বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাড়তি ব্যয়বহনে অক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সঙ্কট। পাশতুন বিদ্রোহী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর সঙ্গে আফগান নাগরিকদের একাংশের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে পাক সেনার অভিযোগ। ইসলামাবাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পাকিস্তান সরকার এবং সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। টিপিপিকে আফগান তালিবানদের একাংশ সরাসরি মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আত্মঘাতী মানববোমা হামলায় আফগান শরণার্থীদের জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে।
প্রসঙ্গত, পাক খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান প্রদেশের পাশতুন গরিষ্ঠ এলাকার একাংশকে দীর্ঘ দিন ধরেই নিজেদের বলে দাবি করে আফগানিস্তান। তালিবান জমানাতেও সেই দাবি প্রত্যাহার করা হয়নি। গত বছরের অগস্টে কাবুলে তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে পাকিস্তান ২,৭০০ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতার বসাতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু তালিবান শাসকদের প্রবল বাধায় সেই কাজ শুরু করা যায়নি। পাক সেনার সাম্প্রতিক বিরোধী অভিযানের সময় সীমান্তে বেশ কয়েক বার বাধাও দিয়েছে আফগানিস্তানের তালিবান ফৌজ।