West Bengal SSC Verdict

‘চাকরিটা কেন আমাদের দেওয়া হল না? হাই কোর্ট মানবিক হোক’, বলছেন চাকরিপ্রার্থী সেই রাসমণি

রাসমণি হাই কোর্টের রায় শোনার পর বলেন, “প্যানেল বাতিল আমাদের দাবি ছিল না। আমাদের দাবি ছিল যে অন্যায় আমাদের সঙ্গে হয়েছে, যে চাকরিটা আমাদের চুরি হয়েছে সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৫
(বাঁ দিকে) রাসমণি পাত্র,  গত ডিসেম্বরে চুল কামিয়ে ফেলার সময়। সোমবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) রাসমণি পাত্র, গত ডিসেম্বরে চুল কামিয়ে ফেলার সময়। সোমবার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

বঞ্চনার উপরে আবার বঞ্চনা করা হল! সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের এসএসসি রায় নিয়ে সংক্ষেপে এমনই মনোভাবের কথা জানাচ্ছেন গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান চালিয়ে যাওয়া চাকরিপ্রার্থীরা। সোমবার সকালে মেয়ো রোডে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে গিয়ে দেখা যায়, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থী রাসমণি পাত্র। গত ডিসেম্বরে এই রাসমণিই এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থানের ১০০০তম দিনে প্রতিবাদস্বরূপ নিজের মাথার চুল কামিয়ে ফেলেছিলেন।

Advertisement

সেই রাসমণি হাই কোর্টের রায় শোনার পর বলেন, “প্যানেল বাতিল আমাদের দাবি ছিল না। আমাদের দাবি ছিল যে অন্যায় আমাদের সঙ্গে হয়েছে, যে চাকরিটা আমাদের চুরি হয়েছে সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।” রাসমণি-সহ ধর্নামঞ্চে থাকা অন্য চাকরিপ্রার্থীদেরও বক্তব্য, অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কেন বঞ্চিত করা হবে। এই প্রসঙ্গে রাসমণি বলেন, “আমরা পরীক্ষা দিয়েছিলাম, আমাদের ওএমআর (উত্তরপত্র) সঠিক। আমরা র‌্যাঙ্কেও এসেছিলাম। তা হলে চাকরিটা কেন আমাদের দেওয়া হল না?”

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এসএসসি মামলার রায় পড়া শুরু করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদি। ২৮১ পৃষ্ঠার রায় পড়া হয়। এসএসসি মামলায় ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করার কথা ঘোষণা করে আদালত। বিচারপতি বসাক জানান, এসএসসি প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের বেতনও ফেরত দিতে হবে। তবে ‘মানবিক কারণে’ সোমা দাস নামের এক চাকরিপ্রাপকের চাকরি বহাল রাখে আদালত। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। রায়ের এই প্রসঙ্গ উদ্ধৃত করে রাসমণি বলেন, “সোমা দাসের প্রতি হাই কোর্ট যেমন মানবিক হয়েছে, আমাদের প্রতিও তেমন মানবিক দৃষ্টি দেখাক।”

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পূর্ব মেদিনীপুরের ভোগপুরে বাড়ি রাসমণির। গত ৯ ডিসেম্বর মাথার চুল কামিয়ে মুণ্ডিতমস্তক হয়ে যান তিনি। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের মধ্যস্থতায় ঠিক হয়েছিল, গত ১১ ডিসেম্বর এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং তাঁর দফতরের আধিকারিকেরা। সেই মতো বৈঠকও হয়। তবে তার আগেই ৯ ডিসেম্বর মাথার চুল কামিয়ে ফেলেন রাসমণি। এই প্রশ্নের উত্তরে রাসমণি সেই সময় বলেছিলেন, ‘‘মহিলাদের মাথার চুল কামালে যেমন দেখতে লাগে, আমায় এখন যেমন দেখতে লাগছে, আসলে এটাই আমার মতো অসংখ্য যোগ্য প্রার্থীর জীবন। আমরা ১০০০ দিন ধরে রাস্তায়। আমাদের কেমন কাটছে সেটাই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম।’’

গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান সোমবার ১১৩৫ দিনে পড়েছে। সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়া রাসমণিকে ধরে দাঁড়িয়েছিলেন আর এক চাকরিপ্রার্থী তনয়া বিশ্বাস। তিনি বলেন, “এটা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত যে প্যানেলটা বাতিল হল। এই প্যানেলে যাঁরা বৈধ ছিলেন, তাঁরা বঞ্চিত হলেন। অনেকেই যোগ্য চাকরিপ্রার্থী, কিন্তু বঞ্চিত। সেই বঞ্চনার উপর আবার বঞ্চনা করা হল।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার মানসিকতা, বয়স, কিছুই প্রায় নেই।” তনয়ার প্রশ্ন, “মেধাতালিকায় থেকে আমাদের কী লাভ হল? আবার যে বঞ্চনা করা হবে না, সেটা কি বলা যায়?”

আরও পড়ুন
Advertisement