নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের নার্সিং কর্মীদের সতর্ক করল স্বাস্থ্যভবন। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
রোগী এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। বৃহস্পতিবার নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যের নার্সিং কর্মীদের সতর্ক করল স্বাস্থ্যভবন। ভাল ব্যবহার না করলে, রোগীদের যত্নে ফাঁক থাকলে কড়া পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাজ্য সরকার। নার্সদের সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, এই নির্দেশিকার কোনও প্রয়োজন ছিল না। তারা এ-ও জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যভবনে কোনও কাজে গেলে তারা যে ব্যবহার পান, তা প্রকাশ করলে ‘লজ্জাজনক’ হবে।
বৃহস্পতিবার যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যভবন, তাতে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ হলেন নার্সেরা। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গলের নামে শপথ নিয়ে নার্স হতে হয়। তাই তাঁদের চারটি বিষয় সব সময় মনে রাখা উচিত— এক, ভাল আচরণ, দুই, সহানুভূতিশীল ব্যবহার, তিন, নমনীয় কথাবার্তা, চার, রোগীর শুশ্রূষায় নিজেকে উৎসর্গ করে শৃঙ্খলা রক্ষা করা। এর পরেই ওই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে যে, অনেক ক্ষেত্রে চোখে পড়েছে রোগীদের সেবার সময় নার্সেরা ঠিক মতো আচরণ করছেন না। তাঁদের আচরণে সহানুভূতিও চোখে পড়ছে না। রোগী বা তাঁর পরিবারের এমনটা প্রাপ্য নয়। সে কারণে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নার্স এবং নার্সিং প্রশিক্ষকদের যত্ন নিয়ে রোগীর দেখভাল করতে হবে। তাঁদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। রোগীদের আবেগের বিষয়টিও মানবিকতার সঙ্গে দেখতে হবে। এই বিষয়ে নার্সিং প্রশাসনকেও সজাগ থাকার কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। এই বিষয়ে অভিযোগ পেলে কড়া পদক্ষেপ করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন।
এই নির্দেশিকা নিয়ে ‘নার্সেস ইউনিটি’-র পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভাস্বতী মজুমদার। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে রোগী পরিষেবা পিছিয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। নার্সেরা সে জন্য দায়ী নন। এই আবহে তিনি বলেন, ‘‘ব্যবহারের কথা তুলে রোগীদের কাছে নার্সদের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিলে, রোগী পরিষেবার তাতে উন্নতি হবে না।’’ এ ক্ষেত্রে তিনি স্বাস্থ্যভবনে কর্তা, কর্মীদের ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা বলছেন ব্যবহার ঠিক করতে, আমরা স্বাস্থ্যভবনে তাঁদের কাছে গেলে কী ব্যবহার পেয়ে ফিরে আসি, তা ভিডিয়ো করে রেখে দেখালে লজ্জার হবে। এ সব নির্দেশিকা দিয়ে জানানোর কিছু নেই।’’ তিনি এ-ও দাবি করেছেন, নার্সদের কারণে অনেক সময়ে হাসপাতালগুলিতে সংঘাতের আবহ তৈরি হতে হতে রক্ষা পায়। তিনি এ-ও অভিযোগ করেছেন যে, হাসপাতালে যে স্থানীয়েরা ভাঙচুর করেন, তাঁদের প্ররোচনা দেন জনপ্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্যালাইন-কাণ্ডের জন্য চিকিৎসকদের দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ডও করেছে স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, চিকিৎসকেরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করলে এক প্রসূতি এবং এক শিশুকে মরতে হত না। এই আবহে রাজ্যের নার্সদের আচরণ নিয়ে কড়া বার্তা দিল স্বাস্থ্যভবন।