Mamata Banerjee Mohan Bhagwat

‘প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস ২২ জানুয়ারি’, সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্য ‘দেশদ্রোহী’, বললেন মমতা

গত বছর ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরে রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’য় সঙ্কল্প করেছিলেন ভাগবত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই দিন বিকালেই হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস ময়দান পর্যন্ত সর্বধর্মসমন্বয়ের মিছিল করেছিলেন মমতা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪২
Mamata Banerjee’s reaction on RSS Chief Mohan Bhagwat Independence Day Statement

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

গত পৌষ সংক্রান্তির দিন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বলেছিলেন, প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস হচ্ছে ২২ জানুয়ারি। কারণ, গত বছর ওই দিনই অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়েছিল। ভাগবতের ওই বক্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাতে নতুন মাত্রা যোগ করলেন তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আরএসএস প্রধানের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মমতা সরাসরি বলেন, ‘‘আমি জানি না, উনি জেনে বলেছেন, না কি না জেনে বলেছেন। এটা একটা অ্যান্টিন্যাশনাল (দেশদ্রোহী) মন্তব্য। আমি এর তীব্র সমালোচনা করছি এবং এই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি করছি।’’ নবান্নে স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিক বৈঠক করছিলেন মমতা। সেখানেই ভাগবত প্রসঙ্গ ওঠে। প্রাথমিক ভাবে মমতা স্বগতোক্তির মতো বলেন, ‘‘এখান থেকে কি রাজনৈতিক মন্তব্যের জবাব দেওয়া ঠিক হবে!’’ পর ক্ষণেই বলেন, ‘‘এটা দেশের স্বাধীনতা বিষয়ক প্রসঙ্গ। তাই এর উত্তর আমি এখান থেকেই দেব।’’

জবাব দিতে গিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন মমতা। তার পর বলেন, ‘‘কোনও দল কি স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস কখনও বিকৃত করতে পারে? এ সব খুবই ডেঞ্জারাস (বিপজ্জনক) কথা। ভারতের নাম ভুলিয়ে দেবে দেখতে পাচ্ছি!’’ বিস্ময় প্রকাশ করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে ইতিহাসের অনেক অধ্যায় বিকৃত করা হয়েছে। সংবিধানের অনেক অধ্যায় পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই রকম হতে পারে বলে আমার ধারণাই ছিল না! আমাদের কাছে স্বাধীনতা দিবস মানে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট। এটা আমাদের গর্ব।’’

উল্লেখ্য, গত বছর ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরে রামলালার ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’য় সঙ্কল্প করেছিলেন ভাগবত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই দিন বিকালেই হাজরা থেকে পার্ক সার্কাস ময়দান পর্যন্ত সর্বধর্মসমন্বয়ের মিছিল করেছিলেন মমতা। যে মিছিলে মমতার পাশে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগুরুদেরও।

১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে এনডিএ জোটের শরিক ছিল তৃণমূল। সেই পর্বে আরএসএসের অনেক নেতার সঙ্গে মমতারও সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু সময়ের নিয়মে সেই সমীকরণ বদলে গিয়েছে। বাংলায় এখন বিজেপিকে ঠেকিয়ে রাখার মূল শক্তিতে পরিণত হয়েছে তৃণমূল। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর্বেও মমতা আরএসএস সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘আগে জানতাম এই সংগঠন দেশাত্মবোধক কাজ করে। কিন্তু এখন দেখছি... ওরে বাবা... সাংঘাতিক!’’ রাজনীতিতে সার্বিক ধারণা হল, আরএসএস-ই নেপথ্য থেকে বিজেপিকে পরিচালনা করে। বঙ্গ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কৌশলে সেই বিজেপির ‘নেপথ্যচারী’ সংগঠনকেই বিঁধেছেন মমতা। সার্বিক ভাবে যা সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী পরিসরে তৃণমূলের অবস্থানের জন্যও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।

পুরনো সম্পর্কের কথা তুলে বাংলায় বাম এবং কংগ্রেস তৃণমূল-আরএসএসের ‘যোগ’ নিয়ে প্রায়ই খোঁচা দেয়। যেমন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আকছার বলেন, ‘‘নাগপুর (আরএসএসের সদর দফতর) থেকে শুধু বিজেপি চলে না, তৃণমূলের সুতোও ওখানেই বাঁধা।’’ একই সুরে কথা বলেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীও। বিজেপি-বিরোধী পরিসরে অধীর-সেলিমদের সেই মন্তব্যকেও তাঁর বক্তব্যে নস্যাৎ করতে চেয়েছেন মমতা।

Advertisement
আরও পড়ুন