Mamata Banerjee

‘ওঁরা দায়িত্ব পালন করলে মা-সন্তানকে বাঁচানো যেত’! স্যালাইন-কাণ্ডে ডাক্তারদের কাঠগড়ায় তুলে বললেন মমতা

স্যালাইন-কাণ্ডে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করার নির্দেশ দিল স্বাস্থ্য দফতর। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আরএমও এবং এমএসভিপি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:২৬
Mamata Banerjee\\\\\\\'s Press Conference

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

স্যালাইন-কাণ্ডে চিকিৎসকদেরই কাঠগড়ায় তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার তিনি নবান্নে জানালেন, সঠিক ভাবে চিকিৎসকেরা দায়িত্ব পালন করলে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ওই প্রসূতি এবং সদ্যোজাতকে বাঁচানো যেত। এই ঘটনায় ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করার নির্দেশ দিলেন তিনি। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের আরএমও এবং এমএসভিপি।

Advertisement

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পাঁচ প্রসূতি। অভিযোগ, স্যালাইন নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। পরে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে অসুস্থ হয়ে পড়া প্রসূতিদের এক জনের সন্তানও প্রাণ হারিয়েছে। এই ঘটনায় চিকিৎসকদের দিকে আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানিয়েছেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পরেও ওই প্রসূতি এবং শিশুকে বাঁচানো যায়নি। কারণ, চিকিৎসকেরা তাঁদের কর্তব্য পালন করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁদের কাছে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, যাঁদের হাতে সন্তান জন্মায়, তাঁরা দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করলে মা এবং সন্তানকে বাঁচানো যেত।’’

মমতা এ-ও জানিয়েছেন, ওটির ভিতরে সিসি ক্যামেরা থাকলে অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরা যেত। অপারেশন থিয়েটারের ভিতরেও সিসি ক্যামেরা থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। একই সুর শোনা গিয়েছে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরা করিডরে থাকে। তাই চিকিৎসকদের গতিবিধি জানতে পারছি না।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর মতোই তিনিও বলেছেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের সময় যে প্রোটোকল মেনে চলা দরকার, তা মানা হয়নি। সিনিয়র চিকিৎসকেরা উপস্থিত না হয়ে জুনিয়র চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করেছেন।’’

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে অসুস্থ হয়ে পড়া পাঁচ প্রসুতির মধ্যে তিন জনের অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁদের তিন জনকেই কলকাতায় এনে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ওই তিন জনের মধ্যে এক জনের শারীরিক অবস্থা একটু বেশি সঙ্কটজনক। তিনি মনে করেন, এই প্রসূতিদের পরিবারের চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তোলার অধিকার রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই প্রসূতিদের পরিবারের কাছে কোনও সান্ত্বনাই আসলে সান্ত্বনা নয়। তারা চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলতেই পারে। ওই পরিবারগুলি কিছু বললে শুনতে হবে।’’

এর পরেই তিনি ৮ জানুয়ারি, ঘটনার দিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে উপস্থিত চিকিৎসক এবং আরএমও, আরএসভিপিকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন। সেই তালিকায় রয়েছেন মাতৃমা বিভাগে ইউনিট ১সি-র বেড ইনচার্জ দিলীপ পাল, সিনিয়র চিকিৎসক হিমাদ্রি নায়েক, আরএমও সৌমেন দাস, অ্যানাস্থেশিস্ট পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়, পিজিটি প্রথম বর্ষের চিকিৎসক মৌমিতা মণ্ডল, পূজা সাহা, ইন্টার্ন চিকিৎসক সুশান্ত মণ্ডল, পিজিটি তৃতীয় বর্ষের চিকিৎসক জাগৃতি ঘোষ, ভাগ্যশ্রী কুন্ডু, পিজিটি প্রথম বর্ষের অ্যানাস্থেশিস্ট মণীশ কুমার, বিভাগীয় প্রধান মহম্মদ আলাউদ্দিন, হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউত। চিকিৎসক দিলীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ওই দিন হাসপাতালের বাইরে অস্ত্রোপচার করছিলেন। বাকিদের কাজে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে সিআইডি।

মমতা তাঁর সরকারের আমলে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির খতিয়ানও তুলে ধরেছেন। তিনি নবান্নে বসে জানিয়েছেন, স্বাধীনতার সময় থেকে রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা ছিল ১১। তাঁর আমলে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৭। তার মধ্যে সরকারি কলেজের সংখ্যা ২৪। রাজ্যে এমবিবিএস আসনের সংখ্যা ১৩৫০ থেকে বেড়ে ৫,৬৫০ হয়েছে। এমডি আসনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১,৮৪৮। সরকারি হাসপাতালে শয্যার সংখাও বেড়েছে। এখন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যার সংখ্যা ৯৭ হাজার। ব্লাড ব্যাঙ্ক, ট্রমা কেয়ারের সুবিধা রয়েছে। রাজ্যে ১৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। ওবিসি মামলার নিষ্পত্তি হলে আরও চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে। রাজ্যে নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৭ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৫১। আগে কেন্দ্রগুলিতে আসন ছিল ২,৫৪৫, এখন ২৮,৪৬৭। সরকারি হাসপাতালে অনুমোদিত নার্সিং কর্মী, প্যারামেডিক্যাল কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আশাকর্মীর সংখ্যা ২ বছরে ১১ হাজার বেড়েছে। এখন ৬৪ হাজার আশা কর্মী রয়েছেন রাজ্যে।

মুখ্যমন্ত্রী এর পরেই মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, পরিকাঠামো, আসন বৃদ্ধির বিষয়টি দেখার কথা প্রশাসনের। কিন্তু চিকিৎসার বিষয়টি ডাক্তারের উপরই নির্ভর করে। সেটা তিনি বা মুখ্যসচিব বা স্বাস্থ্যসচিব পারবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি নীতি হল, সরকারি ডাক্তারদের ৮ ঘণ্টা হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে হবে। সেবা তাদের সবচেয়ে বড় কাজ। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করা যায় না।’’ এর পরেই মমতা জানান, ঘটনার দিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোনও সিনিয়র চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। এ জন্য রোগীর পরিবার আঙুল তুললে, তা সহ্যও করতে হবে। মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement
আরও পড়ুন