রোহিত শর্মা (বাঁদিকে) ও বিরাট কোহলি (ডানদিকে)। —ফাইল চিত্র।
রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের জন্য ১০ দফা নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। কোথাও খেলতে গেলে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি মানতে হবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের। এই নিয়ম চালু হলে এখন থেকে রোহিত-কোহলিদের অনেক ধরনের সুখ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। ‘ইন্ডিয়া টুডে’ বোর্ডের এই নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করেছে।
নতুন নিয়মগুলি আনার নেপথ্যে বোর্ডের কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা চায় ক্রিকেটারেরা খেলার প্রতি আরও মনযোগী হয়ে উঠুক। সেই সঙ্গে দলে একাগ্রতা, শৃঙ্খলা এবং ইতিবাচক মনোভাব চাইছে বোর্ড। ক্রিকেটারদের আরও পেশাদার করাই লক্ষ্য তাদের। অধিনায়ক রোহিত শর্মা, কোচ গৌতম গম্ভীর, প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার ও বিসিসিআই সভাপতি রজার বিন্নীর মধ্যে বৈঠকে ১০ দফা আচরণবিধি তৈরি হয়েছে। কী কী নিয়ম চালু হতে পারে?
১. ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা
জাতীয় দলে সুযোগ পেতে গেলে এবং কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় আসতে গেলে সকল ক্রিকেটারকে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতেই হবে। এর ফলে ক্রিকেটারেরা ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিবেশের মধ্যে থাকবে, ম্যাচ ফিটনেস থাকবে এবং এর ফলে ঘরোয়া ক্রিকেটের মান আরও উন্নতি হবে। তরুণ ক্রিকেটারদের উৎসাহ দেওয়ার জন্যেও সিনিয়রদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা প্রয়োজন। কোনও ক্রিকেটার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে না পারলে আগে থেকে কারণ জানাতে হবে। নির্বাচক প্রধানের অনুমতি নিতে হবে।
২. পরিবারের সঙ্গে যাতায়াত
সমস্ত ক্রিকেটারকে দলের সঙ্গে থাকতে হবে। ম্যাচ এবং অনুশীলন সব ক্ষেত্রেই তাঁকে দলের সঙ্গে যেতে হবে। পরিবারের সঙ্গে আলাদা ভাবে যাতায়াত করা যাবে না। পরিবারের সঙ্গে যাতায়াত করতে হলে কোচ অথবা নির্বাচক কমিটির প্রধানের অনুমতি নিতে হবে।
৩. মালপত্রের বাড়তি ওজন
এখন থেকে যত খুশি জিনিসপত্র নিয়ে সফর করতে পারবেন না ক্রিকেটারেরা। বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী ৩০ দিনের বেশি সফরে গেলে ক্রিকেটারেরা পাঁচটি ব্যাগ নিতে পারবেন। তার মধ্যে দু’টি খেলার সরঞ্জামের কিট ব্যাগ। এই পাঁচটি ব্যাগের মোট ওজন ১৫০ কেজির বেশি হলে চলবে না। সাপোর্ট স্টাফেরা নিতে পারবেন ৮০ কেজি জিনিস। তাঁদের জন্য বরাদ্দ তিনটি ব্যাগ। ৩০ দিনের কম হলে ক্রিকেটারদের জন্য ব্যাগের সংখ্যা কমে হবে চার। কমবে ওজনও। সেই সময় ১২০ কেজির বেশি জিনিস নিতে পারবেন না তাঁরা। সাপোর্ট স্টাফেরা দু’টি ব্যাগ নিতে পারবেন। ওজন ৬০ কেজির বেশি হলে হবে না।
৪. নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিগত সহকারীতে
এখন থেকে ক্রিকেটারেরা আর নিজেদের ম্যানেজার, সহকারী, নিরাপত্তারক্ষী, রাঁধুনি নিয়ে যেতে পারবেন না। বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে এমন কাউকে নিয়ে যেতে হলে। ক্রিকেটারেরা যাতে শুধু খেলার দিকেই মন দেন, সেই কারণে এমন সিদ্ধান্ত।
৫. ব্যাগে সেন্টার অফ এক্সেল্যান্সে পাঠাতে হবে
কোনও বাড়তি সরঞ্জাম বা ব্যক্তিগত কোনও জিনিস নিতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে ক্রিকেটারদের। বেঙ্গালুরুর সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে সেই জিনিস পাঠিয়ে অনুমতি নিতে হবে। তবে বাড়তি জিনিসের জন্য বাড়তি খরচের বোঝা নেবে না বোর্ড। সেই খরচ ক্রিকেটারদের করতে হবে।
৬. অনুশীলনে উপস্থিতি
নির্ধারিত অনুশীলনে আসা বাধ্যতামূলক। দলের সঙ্গে অনুশীলনে যেতে হবে এবং ফিরতে হবে। দলকে একাত্ম করতে এমন সিদ্ধান্ত।
৭. ব্যক্তিগত কাজে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেট সফরের মাঝে বিজ্ঞাপনের কাজ করা যাবে না। কোনও শুট বা বিজ্ঞাপনের কোনও কাজ আর সফরের মাঝে করতে পারবে না ক্রিকেটারেরা। খেলা থেকে মনঃসংযোগ যাতে সরে না যায়, সেই কারণে এমন সিদ্ধান্ত।
৮. ক্রিকেট সফরে পরিবার
৪৫ দিনের বিদেশ সফরে ক্রিকেটারদের সঙ্গে দু’সপ্তাহের বেশি সময় থাকতে পারবেন না ক্রিকেটারেরা। ক্রিকেটারদের সঙ্গী এবং সন্তানদের (১৮ বছরের নীচে) এক বারের জন্যই আসতে দেওয়া হবে। এলেও দু’সপ্তাহের বেশি থাকতে পারবেন না। এই সময়ের সব খরচ বোর্ড দেবে। যদি কোনও কারণে কেউ বেশি দিন থাকেন, তা হলে সেই খরচ ক্রিকেটারকে দিতে হবে। কোচ, অধিনায়ক এবং ম্যানেজারদের ঠিক করে দেওয়া দিনেই শুধু মাত্র পরিবারের লোকজন আসতে পারবেন। ব্যতিক্রম হলে আগে থেকে জানাতে হবে। ক্রিকেটারদের পরিবার বাদ দিয়ে অন্য কাউকে তাঁদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেবে না বোর্ড।
৯. বোর্ডের কাজে উপস্থিতি
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিভিন্ন শুট এবং বিজ্ঞাপনের কাজে ক্রিকেটারদের থাকতে হবে। বোর্ডের অনুষ্ঠানেও তাঁদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। ক্রিকেটের প্রসারের জন্য এটা জরুরি।
১০. সফরের শেষ পর্যন্ত থাকা
ম্যাচ আগে শেষ হয়ে গেলেও ক্রিকেটারদের থাকতে হবে। যত দিন না সফর শেষ হচ্ছে, তত দিন ক্রিকেটারদের থাকতে হবে। আগে চলে আসা যাবে না। দল কাউকে বাড়তি সুবিধা দিতে রাজি নয়। সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত।