Nabanna Rally for R G Kar Protest

নবান্ন অভিযানে গ্রেফতার মোট ২২০, আটক অনেকে, পুলিশ বলল, এই আন্দোলন ছাত্রদের হতেই পারে না!

আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’-এর নবান্ন অভিযান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ২২০ জনকে। আটক করা হয়েছে অনেককে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানাল পুলিশ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৪ ১৯:০৩
Police

নবান্ন অভিযানের পরে সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশকর্তারা। (বাঁ দিক থেকে) এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা এবং ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর নবান্ন অভিযান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ২২০ জনকে। আটক করা হয়েছে অনেককে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে নবান্ন অভিযানকে ‘বেলাগাম, বিশৃঙ্খল তাণ্ডব’ বলে অভিহিত করল পুলিশ। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বললেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হবে বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম অশান্তিপূর্ণ একটি আন্দোলন। এই আন্দোলন কখনও বাংলার প্রকৃত ছাত্র সমাজের হতে পারে না।’’ তিনি এ-ও জানান, এই আন্দোলন ছিল দুষ্কৃতীদের! একই কথা জানান এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা এবং ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। সুপ্রতিম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল সাধারণ মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে প্ররোচনা দেওয়ার চেষ্টা হবে। যাতে পুলিশ বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয়। আমাদের সেই আশঙ্কা অনেকটা সত্যি হয়েছে।’’

Advertisement

মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানে পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে আগেই জানানো হয়েছিল।তাই আন্দোলনকারীদের আটকাতে হাওড়ার জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযান শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে অশান্ত হয় পরিস্থিতি। জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। পুলিশের দিকে উড়ে আসে ইট-পাটকেল, বোতল ইত্যাদি। পাল্টা জলকামান ছোড়ে পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। কয়েকটি জায়গায় লাঠিচার্জও করতে হয়েছে পুলিশকে।

সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ জানিয়েছে, নবান্ন অভিযান থেকে কলকাতা পুলিশ মোট ১২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে ১০৩ জন পুরুষ এবং ২৩ জন মহিলা রয়েছেন। রাজ্য পুলিশের হাতে ধৃতের সংখ্যা ৯৪। পাশাপাশি নবান্ন অভিযানে ১৫ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন বলে তথ্য দেন সুপ্রতিম। তিনি আরও জানান, হাওড়া স্টেশন থেকে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই আন্দোলনের নেপথ্যে যে চক্রান্ত করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে তাঁদের কাছে ‘সুনির্দিষ্ট তথ্য’ রয়েছে বলে জানান তিনি। এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) বলেন, ‘‘এঁরা লাশ ফেলা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।’’ তিনি জানান, আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে ওই অভিযুক্তদের। তার পরে নবান্ন অভিযানে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল। নবান্নমুখী রাস্তায় প্রচুর ব্যারিকেড ছিল। পুলিশকর্তা সমালোচনার সুরে বলেন, ‘‘কিন্তু আন্দোলন কতটা শান্তিপূর্ণ থাকল সেটা দেখলেন সবাই। আন্দোলনকারীরা এলেন। তার পর ব্যারিকেড ধরে ঝাঁকানো শুরু হল। পুলিশ বার বার ঘোষণা করে, ‘ওটা সংরক্ষিত এলাকা। প্ররোচনায় পা দেবেন না।’ তার পরেও ব্যারিকেড ভাঙা হল! বোতল, ইট ছোড়া হল পুলিশের দিকে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হল। গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হল।’’

তাঁর বক্তব্যে বার বার সুপ্রতিম আন্দোলনকারীদের প্রকৃত পরিচয় এবং আন্দোলনের প্রকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘কর্মব্যস্ত একটি দিনে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যাতে সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি হয়। পুলিশ যাতে কোনও প্ররোচনায় পা দেয়। কিন্তু পুলিশ কোনও প্ররোচনায় পা দেয়নি। তারা ধৈর্য এবং সংযমের পরীক্ষা দিয়েছে। রক্তাক্ত হলেন পুলিশকর্মীরা। এর নিন্দার ভাষা আমাদের কাছে নেই।’’ পুলিশকর্তার সংযোজন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র সমাজের নামে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনের চেহারা দেখে মনে হয়নি যে, রাজ্যের প্রকৃত ছাত্রসমাজ এমন অসভ্যতা করতে পারে। বাংলার কোনও ছাত্র এই রকম গুন্ডামি করবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কারা আক্রমণ করেছেন, পুলিশ কত ক্ষণ অপেক্ষা করেছে, তা সবার চোখের সামনেই ঘটেছে।’’ ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘সকাল ৮টা থেকে রাস্তায় ছিলাম। ১১টা নাগাদ ইটবৃষ্টি শুরু করে দুষ্কৃতীরা। আমাদের প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে। আমরা বার বার বলেছি, যাতে আইনশৃঙ্খলা না ভাঙে পুলিশ বাধ্য হয় তাড়া করতে। আমরা বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছি। পুরো কলকাতায় ১২৬ জন গ্রেফতার হয়েছেন।’’

পাশাপাশি বুধবার বিজেপির ডাকা বন্‌ধ নিয়েও মন্তব্য করেন সুপ্রতিম। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন আদালতের নির্দেশ রয়েছে, বন্‌ধ ডাকা সম্পূর্ণ বেআইনি। তাই প্রশাসনের তরফে সব রকম বন্দোবস্ত থাকবে পুলিশের। আরও একটি কর্মব্যস্ত দিন যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য প্রশাসন-পুলিশ সব ব্যবস্থা করবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement