Abhishek Banerjee

রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসায় অভিষেক, হাসপাতাল উদ্বোধনে গিয়ে মানবিক হওয়ার বার্তা বেসরকারি কর্তৃপক্ষকেও

আরজি কর পর্বে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে নানাবিধ অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছিল। চিকিৎসককে সরকারি হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতেরাও সরব হয়েছিলেন, আন্দোলনে নেমেছিলেন। যাকে ‘অস্ত্র’ করে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল বিরোধীরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৫
TMC MP Abhishek Banerjee praised the health system of the state government

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

নিজের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে ৭৫ দিন ধরে স্বাস্থ্য পরিষেবার কর্মসূচি করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ‘সেবাশ্রয়’-এ সাতটি বিধানসভার প্রায় ৩০০ শিবিরে পরিষেবা পেয়েছেন ১২ লক্ষের বেশি মানুষ। সেই পর্বে প্রশ্ন উঠেছিল, অভিষেক কি নিজের কেন্দ্রে রাজ্য সরকারের ‘সমান্তরাল’ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করছেন? তার জবাব এর আগেও দিয়েছেন অভিষেক। শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে ‘জগন্নাথ গুপ্ত মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল’ উদ্বোধনে গিয়ে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।

Advertisement

অভিষেক বলেন, ‘‘৩৪ বছরে স্বাস্থ্য রসাতলে গিয়েছিল। রাজ্য সরকার বিগত ১৪ বছরে স্বাস্থ্যব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নির্মাণ থেকে নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি, শিশুদের জন্য এসএনসিইউ তৈরি করা থেকে সারা রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে এক লক্ষ বেড বৃদ্ধি, ১৪ হাজার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র— সবই হয়েছে ১৪ বছরের কম সময়ে।’’

এর পরেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য যোজনা আয়ুষ্মান ভারতের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের ফারাক তুলে ধরেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র একাধিক শর্ত দিয়ে আয়ুষ্মান ভারত করে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করেছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও শর্ত ছাড়া স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু করেছেন। যে কার্ড দেওয়া হয় পরিবারের বর্ষীয়ান মহিলা সদস্যের নামে। নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক স্বাস্থ্যসাথী।’’

প্রসঙ্গত, আরজি কর পর্বে রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে নানাবিধ অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছিল। চিকিৎসককে সরকারি হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতেরাও সরব হয়েছিলেন, আন্দোলনে নেমেছিলেন। যাকে ‘অস্ত্র’ করে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল বিরোধীরা। তাদের মধ্যে আগুয়ান ভূমিকায় ছিল বামেরা। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার হাতেই। শনিবার নাম না করে বামেদের উদ্দেশ্য করে অভিষেক বলেছেন, ‘‘৩৪ বছর বনাম ১৪ বছরের পরিসংখ্যান নিয়ে আসবেন, তার পর আঙুল তুলবেন।’’

অভিষেক সাধারণত সরকারি এবং বেসরকারি কর্মসূচি এড়িয়ে চলেন। নিজের সংসদীয় এলাকা এবং দলের কাজেই তাঁর আগ্রহ। কেন তিনি সোদপুরে বেসরকারি হাসপাতালের উদ্বোধনে রাজি হয়েছেন তা-ও খোলসা করেন অভিষেক। ‘জগন্নাথ গুপ্ত মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল’-এর ভিত্তি বজবজে। কর্ণধার জগন্নাথের গুপ্তের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে। রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালও। অভিষেক জানিয়েছেন, জগন্নাথের সংস্থা তাঁর ‘সেবাশ্রয়’ কর্মসূচিতে নানা ভাবে চিকিৎসক, পরিকাঠামো, চিকিৎসার সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করেছিল। শিবিরে আসা এক শিশুর দ্রুত চিকিৎসার ক্ষেত্রেও তৎপর হয়েছিল জগন্নাথের হাসপাতাল। সেই সময়েই অভিষেক কথা দিয়েছিলেন, দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি উদ্বোধনে হাজির থাকবেন।

কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ২৪ একর জমিতে গড়ে উঠছে হাসপাতালটি। কাজ সম্পন্ন হলে ১,২০০ শয্যার হাসাপাতাল হবে এটি। পরবর্তীতে হবে ২০০ আসনের মেডিক্যাল কলেজও। শনিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কৃষি এবং পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, বজবজের বিধায়ক অশোক দেব-সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি। উল্লেখ্য, সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় চন্দ্রিমাও অভিষেকের ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্পের প্রশংসা করেছেন। অভিষেক সার্বিক ভাবে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের কাজের খতিয়ান তুলে ধরে জনপ্রতিনিধিদের ‘কাজ’ করার বার্তা দিয়েছেন।

শনিবারের কর্মসূচি থেকে বেসরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে ‘মানবিক’ হওয়ার বার্তাও দেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘নানা কারণে দেখা যায় যত বড় হাসপাতাল, তত লম্বা হয় বিল। আমি অনুরোধ করব, চিকিৎসা করাতে আসা মানুষকে যাতে সর্বস্বান্ত না হতে হয়ে, তা আপনারা দেখবেন।’’ যে হাসপাতাল উদ্বোধনে গিয়েছিলেন, তাদের উদ্দেশেও একই বার্তা দিয়েছেন অভিষেক।

Advertisement
আরও পড়ুন