অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার প্রতি ‘বঞ্চনা’ নিযে গত দেড় বছর ধরে সরব তৃণমূল। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ করাকে গত লোকসভা নির্বাচনে প্রচারের ভাষ্য করেছিল বাংলার শাসকদল। এ বার প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে তার সঙ্গেই জুড়তে চাইলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার তিনি সরাসরি বলেছেন, ‘‘এই রায়ে ভারতীয় জনতা পার্টির বিমাতৃসুলভ আচরণের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি।’’
শনিবার অভিষেক গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের উদ্বোধন করতে। সেই মঞ্চ থেকেই তিনি বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টকে মর্যাদা করি। আমরা মনে করি বিচারব্যবস্থা মাথা নত করেনি। বিচারব্যবস্থা এখনও নিরপেক্ষা রয়েছে। কিন্তু কোনও রায় নিয়ে সমালোচনা করার অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, ঠিক এই একই সুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট রায়টির সমালোচনা করেছিলেন। ওই বক্তব্যের পরেই অভিষেক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার প্রতি বঞ্চনার প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তাঁর কথায়, ‘‘১০-১৫ জন ভুল করেছে। তার জন্য ৬০ লক্ষ মানুষের টাকা আটকে রেখেছে। অন্য দিকে দেখুন বাড়ির ক্ষেত্রে। কোথাও অভিযোগ হলেই সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নিই, এক হাজার জন ভুল করেছে, তা হলে শাস্তি সেই এক হাজার জনকেই দিতে হবে। তার জন্য ১৭ লক্ষ মানুষের বাড়ি আটকে রাখতে পারেন না।’’
এর পরেই অভিষেক এসএসসি প্রসঙ্গ আনেন। তাঁর কথায়, ‘‘যদি অযোগ্য কেউ চাকরি পেয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হোক, তদন্ত হোক, তাকে শ্রীঘরে পাঠান, তার চাকরি যাক, তার থেকে টাকা ফেরত নিন। কিন্তু কিছু অযোগ্যের জন্য আপনি ১৬,০০০-১৭,০০০ যোগ্যের চাকরি কেড়ে নিতে পারেন না।’’
নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতাও ‘কিছু অযোগ্যের’ জন্য পুরো প্যানেল বাতিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। অভিষেক আরও এক ধাপ এগিয়ে বললেন, তাঁর ‘পর্যবেক্ষণ’ হল, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিজেপির আচরণের প্রতিফলন রয়েছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বলেছিলেন, যোগ্যদের বিষয়টি আগে মিটিয়ে নিয়ে তিনি বাকিদেরটাও দেখবেন। কারণ, কাকে অযোগ্য বলা হচ্ছে, কেন বলা হচ্ছে, তা রাজ্য সরকারের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে অভিষেক ‘অযোগ্য’দের বিষয়টিকে গুরুত্বই দেননি। অনেকের মতে, অভিষেক আসলে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দলকে রাজনৈতিক জবাব দেওয়ার ভাষ্য তৈরি করে দিতে চেয়েছেন।
অভিষেকের পাল্টা বক্তব্য অবশ্য আসতে সুরু করেছে। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘জানতাম অভিষেক এমবিএ করেছেন। শিক্ষিত। তিনি এমন শিশুসুলভ কথা বলেন কী করে? আসলে আবাস এবং ১০০ দিনের কাজে তৃণমূলের কয়েক জনের দুর্নীতির জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ ভুক্তভোগী। এখানেও তৃণমূলের চোরেদের জন্য যোগ্য শিক্ষকেরা চাকরি হারিয়েছেন। ১০০ দিনের কাজ এবং আবাসে রাজ্য সরকার হিসাব দেয়নি, এসএসসিতেও সময় পেয়ে চাল-কাঁকর আলাদা করেনি।’’
প্রসঙ্গত, অভিষেক ধীর্ঘ দিন ধরেই বিচারব্যবস্থার একটি অংশকে বিঁধে সমালোচনা করেন। এ বার নির্দিষ্ট মামলার রায়কে ‘বিজেপির আচরণের প্রতিফলন’ বলে তোপ দাগলেন। গত ৩ এপ্রিল এসএসসি মামলার রায় ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ। তার পর থেকে অভিষেককে কিছু বলতে শোনা যায়নি। এমনকি, সমাজমাধ্যমেও কোনও পোস্ট করেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। শাসকদলের একটি অংশের মধ্যে জল্পনা ছিল, অভিষেক কি আরজি কর পর্বের মতোই ‘সরে থাকতে’ চাইছেন? কারণ, সেই সময়েও সমাজমাধ্যমে কয়েকটি পোস্ট ছাড়া গোড়ায় অভিষেককে সে ভাবে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। আরজি করের ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পরে গত বছর ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে বক্তৃতায় আরজি করের প্রসঙ্গে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু এসএসসি মামলার রায় বেরনোর ন’দিনের মাথায় পাল্টা রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করতে চেয়েছেন অভিষেক।