Abhishke Banerjee At Thakurnagar

ঠাকুরবাড়িতে মূল মন্দিরে ঢোকা হল না অভিষেকের, দরজায় খিল দিয়ে ভিতরে মন্ত্রী শান্তনু

তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচির মধ্যেই ঠাকুরনগরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বিজেপির বাধায় তা সম্ভব হল না।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ ১৭:০২
Image of Abhishek Banerjee and Shantanu Thakur.

মতুয়াদের মূল মন্দিরে ঢুকতে না পেরে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে চ্যালেঞ্জ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। —ফাইল চিত্র।

মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরনগরে গেলেও মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সকাল থেকেই অভিষেকের কর্মসূচি সফল করতে না দেওয়ার লক্ষ্যে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আসছেন শুনেই আসরে নামেন স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে বাদানুবাদের মধ্যেই মূল মন্দিরে ঢুকে পড়েন শান্তনু। ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। ফলে অভিষেকের আর মন্দিরে প্রবেশ করা হয়নি। অপেক্ষার পরে পাশেই অন্য একটি মন্দিরে পুজো দেন অভিষেক। পরে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়েই শান্তনুকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক জানান, তিন মাস অন্তর তিনি ঠাকুরনগরে যাবেন।

রবিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ায় জনসংযোগ কর্মসূচিতে যোগদানের আগে গাইঘাটার ঠাকুরবাড়িতে পুজো দিতে গিয়েছিলেন অভিষেক। এই কর্মসূচি ঘিরে রবিবার সকাল থেকেই বনগাঁর ঠাকুরনগরে প্রশাসনিক ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। বিজেপির বিক্ষোভ ঘিরে সংঘাতের আশঙ্কায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যস্ততাও ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, বিধানসভার মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ, দলের বিধায়ক তাপস রায়েরা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে ৪টে নাগাদ ঠাকুরনগরে পৌঁছয় অভিষেকের কনভয়। ঠাকুরবাড়ির সামনেই অনুগামীদের নিয়ে হাজির ছিলেন শান্তনু। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁ দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া।

Advertisement

অভিষেক ঠাকুরবাড়িতে পৌঁছতেই শান্তনু মূল মন্দিরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে দেন। হরিচাঁদ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত মন্দিরে আর প্রবেশ করা হয়নি অভিষেকের। সেই সময় আগাগোড়াই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পাশে ছিলেন প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের পত্নী তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। মন্দিরে ঢুকতে না পেরে মমতাবালাকে পাশে নিয়েই ক্ষোভ উগরে দেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘আমার কোনও কর্মসূচি ঠাকুরনগরে ছিল না। ছিল ২০ কিলোমিটার দূরে হাবড়ায়। কিন্তু আমি এখানে এসেছিলাম পুজো দিতে। কিন্তু দরজা বন্ধ করে আমাকে পুজো দিতে দেওয়া হল না। বিজেপি ও শান্তনু ঠাকুর মিলে এই কাজ করেছে। আমি তার জবাব দেওয়ার দায়িত্ব এখানকার জনগণকে দিয়ে রাখলাম।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ঠাকুরবাড়ি কারও একার সম্পত্তি নয়।’’

শনিবার বনগাঁ ও গাইঘাটায় রোড-শো করেছিলেন অভিষেক। তার পরেই তাঁর ঠাকুরবাড়ি যাওয়ার কর্মসূচি তৈরি হয়। কিন্তু তার আগেই রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঠাকুরনগর চত্বর। মূল মন্দিরের সামনেই মতুয়াদের দুই পক্ষের ধাক্কাধাক্কি বেধে যায়। মূল মন্দিরে পুলিশি কড়াকড়ি দেখেই প্রশ্ন তোলেন সাংসদ শান্তনু। জানাতে চান, কেন এত পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়। সূত্রের খবর, পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রীকে জানানো হয়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আসবেন, তাই এখানে পুলিশি নিরাপত্তা জোরালো করা হয়েছে।

পুলিশ-প্রশাসনের এমন জবাব শুনেই শান্তনু ঘোষণা করেন, ‘‘অভিষেকের সফরের পরে মন্দির-সহ গোটা ঠাকুরবাড়িকে গোবরজল দিয়ে ধুয়ে পবিত্র করা হবে।’’ এর পরেই মূল মন্দিরে ঢুকে সদর দরজায় খিল দিয়ে দেন শান্তনু। অভিষেক দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করে মন্দিরে দরজা না খোলায় পাশের মন্দিরে পুজো দিতে যান। পরে ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘শান্তনু ঠাকুর বলেছেন, আমি এখান থেকে যাওয়ার পর নাকি ঠাকুরবাড়িকে গোবরজল দিয়ে ধোয়া হবে। তা হলে আমি বলব, আমি এখানে তিন মাস অন্তর আসব, তা হলে অন্তত গোবরে হাত দেবেন বিজেপি নেতারা। কারণ শান্তনু ও বিজেপি নেতাদের মাটিতে পা পড়ে না। আর তাতে ঠাকুরনগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে।’’ তবে অভিষেক চলে যেতেই মন্দিরের বাইরে আসেননি শান্তনু। বেশ কিছু ক্ষণ ভিতরেই ছিলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement