প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দু’পাশে দুই ‘ঘনিষ্ঠ’ কাউন্সিলর পার্থ সরকার এবং বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।
নিয়োগকাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ভূমিকা নতুন করে খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে ইডি। নিয়োগ মামলায় পার্থকে গ্রেফতার করেছিল ইডি। অন্য দিকে, এসএসসির সব মামলাতে পার্থের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে সিবিআই। এ বার প্রাথমিক নিয়োগে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর কী ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখতে ইডি সক্রিয় হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রে খবর। আর তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পার্থ ‘ঘনিষ্ঠ’ আরও এক কাউন্সিলরকে তলব করল ইডি। ইডি তলব করছে কলকাতা পুরসভার ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তকে। চলতি সপ্তাহেই তাঁকে ইডির কলকাতার দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাটুলি, নাকতলা-সহ সংলগ্ন এলাকায় গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বাপ্পাদিত্যের ‘দাপট’ সর্বজনবিদিত। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন’ হিসাবেও পরিচিতি গড়ে উঠেছিল তাঁর। ইডি মনে করছে, পার্থের সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা ছিল বাপ্পাদিত্যের। তাই নিয়োগ মামলায় পার্থের ভূমিকা সম্পর্কে বাপ্পাদিত্য অনেকটাই জানেন বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। প্রাথমিকের মামলায় পার্থের ভূমিকা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বাপ্পাদিত্যকে চলতি সপ্তাহে ইডি দফতরে তলব করা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। পাশাপাশি ইডির একটি সূত্র এ-ও দাবি করেছে যে, পার্থের বাড়িতে কাদের যাতায়াত ছিল এবং সেখানে কী নিয়ে বৈঠক চলত, তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তৃণমূল কাউন্সিলরকে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে নিয়োগকাণ্ডে নাম জড়ায় বাপ্পাদিত্যের। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে চাকরি সংক্রান্ত নথি পাওয়া গিয়েছিল বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের একটি সূত্র দাবি করেছিল। সূত্রের খবর, নিয়োগের সুপারিশপত্রও পাওয়া গিয়েছিল। এর আগে ২৫ জানুয়ারি সিবিআইয়ের তলবে নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিয়েছিলেন বাপ্পাদিত্য। সেখানে তাঁকে নিয়োগ মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের বাড়িতে কারা আসতেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। নিজাম প্যালেস থেকে বেরোনোর সময় সে কথা নিজেই জানিয়েছিলেন বাপ্পাদিত্য।
সম্প্রতি, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত আরেক কাউন্সিলর পার্থ সরকারকে তলব করেছিল ইডি। এই পার্থ রাজনৈতিক মহলে ‘ভজা’ নামেই অধিক পরিচিত। তিনি বহু দিন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আপ্তসহায়ক হিসাবে কাজ করেছেন। এর আগে ইডির তলব এড়ালেও গত ২৩ জানুয়ারি তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেন। রাত পর্যন্ত সিজিওতে জেরা করা হয় তাঁকে। সূত্রের খবর, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষমন্ত্রীর ভূমিকা আরও গভীরে খতিয়ে দেখতেই তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি।
সম্প্রতি আদালতে এসএসসির একটি মামলার শুনানি চলাকালীন, সিবিআই দাবি করেছিল, শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কাকে নিয়োগ করা হবে, কাকে সরানো হবে, পার্থ সেই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন। যাঁরা এই কাজে তাঁকে সাহায্য করতেন না, তাঁদের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর কোপে পড়তে হত। পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হত তাঁদের। পার্থের বাড়িতে বিভিন্ন বৈঠক হত। যাঁরা দুর্নীতিতে সাহায্য করতেন না, তাঁদের সরিয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিবিআইয়ের পর ইডিও এ বার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্র এ-ও দাবি করছে যে, প্রাথমিকের নিয়োগে পার্থের কী ভূমিকা ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখতে চাইছে ইডি। আর তা নিয়েই ভজার পর এ বার বাপ্পাদিত্যকে তলব করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।