Suvendu Adhikari

সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মোদীকে চিঠি শুভেন্দুর, জানতে চান, কেন্দ্রীয় সংস্থা কি মমতাকে ভয় পাচ্ছে?

রবিবারই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন মমতা-সহ ৮টি বিরোধী দলনেতা। সিবিআই, ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে বিরোধীদের অপদস্থ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয় সেই চিঠিতে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ১২:১৬
Suvendu Adhikari writes to PM Narendra Modi regarding CBI and Mamata Banerjee.

রবিবার মমতা-সহ আট বিরোধী দলনেতা প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে শুভেন্দুর নাম ছিল। ফাইল চিত্র।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে অভিযোগের চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দুও। তবে দু’জনের ‘নালিশে’র লক্ষ্য এক হলেও কারণ আলাদা। মমতা যেখানে ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে বিরোধীদের অপদস্থ করার জন্য শাসকের অস্ত্র বলে বোঝাতে চেয়েছেন সেখানে শুভেন্দুর অভিযোগ সম্পূর্ণ উল্টো। মোদীকে তাঁর নালিশ, সিবিআই তাঁর পদের জন্য মমতাকে সমীহ করে চলছে। তাই নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। মোদীকে এই মর্মে লেখা একটি চিঠিতে শুভেন্দু প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কেন্দ্রের সংস্থা সিবিআই কি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদকে ভয় পাচ্ছে? তা না হলে সারদা মামলার দশ বছর পরও কেন তাঁর বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত শুরু করছে না!’’

লক্ষ্যণীয়, রবিবার মমতা-সহ আট বিরোধী দলনেতা প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে শুভেন্দুর নাম ছিল। শুভেন্দুকে নারদা মামলায় অভিযুক্ত বলে জানিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন, বিরোধী দল থেকে যে সমস্ত নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা থাকলেও তার তদন্তের গতি মন্থর হয়েছে। যা আরও বেশি করে বিরোধীদের দাবি প্রমাণ করে। বিরোধীদের সেই চিঠির পরই সোমবার সকালে শুভেন্দু চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। যেখানে সারদা মামলায় মমতার ভূমিকা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা। পাঁচ পাতার চিঠিতে তিনি একে একে জানিয়েছেন, সারদা মামলায় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ উঠেছিল, তার প্রেক্ষিতে সিবিআই কী বলেছিল এবং মামলার দশ বছর পরেও কোন কোন ক্ষেত্রে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি, ‘‘সারদার সঙ্গে মমতার সম্পর্ক তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বহু আগে থেকে’’ বলেও অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু।

Advertisement

কাঁথির বিজেপি নেতা লিখেছেন, ‘‘২০১৪ সালে সারদা মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছিল, যেহেতু এই মামলায় শাসকদলেরই বহু প্রভাবী জড়িত, তাই রাজ্য পুলিশকে এই মামলার তদন্তভার না দিয়ে সিবিআইকে দেওয়া হোক। আশা ছিল, এই মামলার মূলে যিনি বা যাঁরা, তাঁকে বা তাঁদের পদমর্যাদায় প্রভাবিত না হয়ে সিবিআই প্রকাশ্যে আনবে। কিন্তু তা হয়নি। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সারদা মামলায় সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে যাঁর, তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করার ব্যাপারে সিবিআই উদাসীন। এর কারণ কি সিবিআই পদকে সমীহ করে চলছে?’’

যুক্তি হিসাবে চিঠিতে শুভেন্দু টেনে এনেছেন সারদা মামলায় সিবিআইয়ের পুরনো বক্তব্যও। যেখানে মমতার আঁকা ছবি সারদা গোষ্ঠীর তরফে কোটি টাকায় কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছিল সিবিআই। এ ছাড়াও মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের ক্যাটারিং এবং অন্যান্য যাত্রী পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা আইআরসিটিসির সঙ্গে সারদার ট্যুরের প্রসঙ্গও টেনেছেন। সারদা মামলায় নাম না করে সারদার সংবাদ মাধ্যমগুলির প্রাক্তন গ্রুপ সিইও তথা তৃণমূলের তৎকালীন সাংসদ কুণাল ঘোষের গ্রেফতারির কথাও উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু ওই চিঠিতে। তিনি লিখেছেন, ‘‘ওই সাংসদ গ্রেফতার হওয়ার পর বার বার বলেছিলেন, ‘মমতাই সারদা কেলঙ্কারির সবচেয়ে বড় সুবিধাপ্রাপ্ত।’ কেন তা শুনেও শোনেনি সিবিআই?’’

রাজ্যে বহু মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে অবশ্য শুভেন্দুর মতো একই অভিযোগ করেছিলেন বাংলার আরএক বিজেপি নেতা তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, সিবিআইয়ের বহু অফিসারই নিজেদের দায়িত্ব পালনে বিরত থাকছেন বাংলায়। এমনিতে বিজেপির অন্দরে এই দুই নেতার তেমন মতানৈক্য সাম্প্রতিক কালে দেখা না গেলেও কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআইকে দোষারোপ করার বিষয়ে অবশ্য সোমবার দিলীপের সুরেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন শুভেন্দু।

আরও পড়ুন
Advertisement