নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির পোস্টার নিয়ে শুভেন্দুর মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
নন্দীগ্রামের করপল্লির শহিদ বেদি গঙ্গাজল দিয়ে ধুইয়ে ‘পবিত্র’ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। সকালে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ওই শহিদ বেদিতে মালা দিয়ে অপবিত্র করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়কের। তাই তেখালি থেকে মিছিল করে মহেশপুরের করপল্লির গিয়ে শহিদ বেদিতে এসে নিজের হাতে গঙ্গাজল ঢালেন তিনি। কর্মসূচি শেষে গোবর জল দিয়ে এলাকা শুদ্ধ করার জন্যও স্থানীয় মহিলাদের কাছে আহ্বান জানান।
শুভেন্দু বুধবার বিকেলে বলেন, ‘‘কিছু ছোটলোক সকালে এসে শহিদ বেদী অপবিত্র করে গিয়েছে। আমাদের সভা শেষে এই এলাকার মায়েরা গোবর জল দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করবেন। শহিদ তর্পণের নামে কিছু জেহাদিদের মঞ্চে এনে শুধু কুৎসা করে গিয়েছে।” শুভেন্দুর দাবি, ওই নেতারা (তৃণমূল) কোনও শহিদের নাম নেননি। শহিদ পরিবার সম্পর্কে কিছুই বলেননি। শুধু কুৎসা করে গিয়েছেন। এর পর রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, “আসলে ওরা নন্দীগ্রাম আন্দোলন সম্পর্কে কিছু জানলে তবেই তো বলবে।’’
ঘটনাচক্রে, গত ৭ জানুয়ারি ঝাড়গ্রামের নেতাইয়ে শহিদ দিবসের দিন শুভেন্দু মালা দেওয়ার পরে একই কায়দায় তা গঙ্গাজলে ধুয়ে ‘পবিত্র’ করেছিল তৃণমূল।
বুধবার সকালে নন্দীগ্রামের কর্মসূচিতে শুভেন্দুকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সে প্রসঙ্গে শুভেন্দুর খোঁচা, “আমি ওদের নাম ধরে ওদেরকে প্রচার করতে চাই না। ওরা তৃণমূলের কর্মচারী, চাকরবাকর। মুখ্যমন্ত্রী যে দিন কিছু বলবেন, সে দিন আমি বলব। বাকি এই সব কর্মচারীদের উত্তর দিতে আমি আসিনি আজকের এই পবিত্র দিনের মঞ্চে।’’
প্রায় দেড় দশক আগেকার নন্দীগ্রাম আন্দোলন সম্পর্কে শুভেন্দুর মন্তব্য, “ভরত, সেলিম, বিশ্বজিতের মতো ছেলেরা সর্বস্ব দিয়ে নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে সফল করেছিলেন। এই আন্দোলনকে বিশ্বের মাঝে তুলে এনেছিলেন নিজেদের জীবন দিয়ে।’’ এর পরই জমায়েতের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘এই মানুষগুলি বেইমান নন, তাই শুভেন্দুর সঙ্গে আছেন। এটাই আসল নন্দীগ্রাম।” বলে দাবী শুভেন্দুর।
শাসক শিবিরের সন্ত্রাস সত্ত্বেও আগামী দিনে তিনি নন্দীগ্রামের পাশে থাকবেন জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনে যে ভাবে আমি নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, পঞ্চায়েত ভোটেও সে ভাবেই নন্দীগ্রামে আমি নেতৃত্ব দেব। তৃণমূলকে বুঝিয়ে দেব এখানকার মানুষ আমার সঙ্গেই আছেন।’’
২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর তৃণমূলের থেকে নন্দীগ্রাম ‘পুনর্দখল’ করে ‘সূর্যোদয়’-এর কথা বলেছিল সিপিএম। প্রতি বছর এই দিনটিকে ‘নন্দীগ্রাম দিবস’ হিসেবে পালন করে তৃণমূল। গত বছর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে নন্দীগ্রামে তৃণমূলের কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। অন্যদিকে, ‘ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র পতাকা নিয়ে ‘অরাজনৈতিক কর্মসূচি’ পালন করেছিলেন তখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য শুভেন্দু। তার কিছু দিন পরেই মন্ত্রিত্ব এবং বিধায়ক পদ ছেড়ে বিজেপি-তে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেন তিনি।