ফাইল চিত্র।
সত্যি বলছি এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার গাড়ির চালকের মুখে প্রথম যখন শুনলাম, মনে হল নিশ্চয় ভুল খবর। ক’দিন আগেও অভিষেকের বাড়িতে একসঙ্গে বসে কত গল্প হল। বললেন দাঁতের ট্রিটমেন্ট চলছে। খেতে অসুবিধা হচ্ছে। ভাবতে পারছি না মানুষটা নেই।
আসলে সুব্রতদার সঙ্গে আমার আলাপ তো রাজনীতির সূত্রে নয়, তার বহু আগে। ১৫/১এ গড়িয়াহাট রোডে আমাদের আর সুব্রতদার ফ্ল্যাট ছিল মুখোমুখি। প্রতিদিন দেখা হত। কথা হত। সুব্রতদার ফ্ল্যাটের দরজা খুললে আমাদের ফ্ল্যাটে হাওয়া বয়ে যেত। সুব্রতদার মতোই তাজা বাতাস। হাসিঠাট্টা আর আনন্দে পাশাপাশি দুটো পরিবার অনেকদিন কাটিয়েছি। কত ছোট ছোট স্মৃতি ভিড় করে আসছে।
রাস্তার ধারে বাড়ি বলে গাড়িঘোড়ার আওয়াজ আসত। কোনও কোনও দিন আমাদের ফ্ল্যাটে এসেও ইন্টারভিউ দিতেন। আবার আমাদের ফ্ল্যাটে এসে চটি ভুলে চলেও খালি পায়ে চলেও গিয়েছেন। আমরা দিয়ে এসেছি।
১৯৮৬ সাল থেকে আমার বিয়ে হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় দেখা হত সুব্রতদার সঙ্গে। আমার বিয়ের অনেক দায়িত্ব সামলেছেন দাদা। নিজে গিয়ে নকুড়ের মিষ্টির অর্ডার দিয়ে এসেছিলেন। নিজেও মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসতেন। বিয়ের দিন বুদ্ধবাবু-সহ অন্য রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট নিমন্ত্রিতদের নিজে অভ্যর্থনা করেছেন।
একসঙ্গে বাটানগরে ঠাকুর দেখতে গিয়েছি। আবার ইডেনে বসে হুল্লোড় করতে করতে খেলা দেখেছি ওঁর সঙ্গে। আসলে নিজের দমে হিরো ছিলেন সুব্রতদা। ওঁর পাশে আর কাউকে লাগত না।
একবার এমনই এক কালীপুজোর রাতে আমরা বাজি পোড়াচ্ছি ছাদে। একটা হাউই বোধহয় নীচে চলে গিয়েছিল। একজন তো প্রবল হুজ্জোতি শুরু করে দিয়েছেন। লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছে। চিৎকার চ্যাঁচামেচি। এ সব দেখে আমাকে নিয়ে তরতরিয়ে সুব্রতদা নীচে নেমে এলেন। দাঁড়ালেন লোকটির সামনে। আমাদের দেখে তিনি চুপ। আর কী বলবেন!
সেই কালীপুজোর দিনেই চলে গেলেন মানুষটা।