সুব্রত মুখোপাধ্যায়
তাঁর হাত ধরেই সত্তরের দশকে ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। দীপাবলির দিনে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এমন আলোর দিনে অন্ধকার নেমে আসবে ভাবতেও পারিনি।’’
পাশাপাশি, বৃহস্পতিবার রাতে এসএসকেএম হাসাপাতালে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘সুব্রতদার মরদেহ দেখতে পারব না।’’
রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ সুব্রতদার মৃত্যুতে আমরা সকলেই মর্মাহত।’’ আর এক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বেসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সত্যিই অপূরণীয় ক্ষতি।’’
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজনৈতিক তত্ত্বকথা নয়, তাঁকে দেখেই ছাত্র পরিষদের রাজনীতি শুরু করেছিলাম। ওঁর কাছে অনেক কিছু শিখেছি। উনি আমার রাজনৈতিক গুরু। আজ আমার গুরুবিয়োগ হল। সুব্রতদা নেই, এটা এখনও বাবনে পারছি না। অকস্মাৎ ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল, অকস্মাৎই বিচ্ছেদ হল। শেষ হয়ে গেল বাংলার রাজনীতির পাঁচ দশকের এক ইতিহাস।’’
কলকাতার মেয়র পরে সুব্রতের উত্তরসূরি বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও ব্যক্তিগত স্তরে উনি কখনও বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেননি। এটা ওঁর চরিত্রের বড় দিক। আমি ওঁর (সুব্রত) পরে মেয়র হয়েছিলাম। সে সময় উনি নানা পরামর্শ দিয়েছেন আমাকে।’’
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বৃহস্পতিবার রাতে সুব্রতের প্রয়াণের খবর শুনে বলেন, ‘‘দক্ষিণপন্থী রাজনীতির অনুসারী হলেও আমাদের মধ্যে আদর্শগত মতপার্থক্য ছিল। ওঁর রাজনৈতিক জীবন সত্যিই ঈর্ষণীয়। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা ছিলেন, উনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম।’’
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ লেখেন, ‘প্রবীণ জননেতা, সফল রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন মেয়র, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় পঞ্চায়েতমন্ত্রী শ্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আকস্মিক প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করি।’
’সুব্রতের প্রয়াণের খবর শুনে সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি বেদনাহত। রাজ্য রাজনীতিতে উনি ছিলেন এক বর্ণময় চরিত্র। আমার সঙ্গে ওঁর বরাবরই ব্যক্তিগত সখ্য ছিল। উনি যখন কলকাতায় মেয়র ছিলেন আমি তখন রাজ্যের পুরমন্ত্রী। আমরা এক সঙ্গে কাজ করতাম। কখনও বোঝা যেত না আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য রয়েছে। কত বার ওঁর বাড়িতে গিয়েছি। এখন যাঁরা রাজ্যের শাসকদলের নেতৃত্বে, তাঁদের মধ্যে উনি সত্যিই ব্যতিক্রম।’’
কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের প্রিয় সুব্রতদার সঙ্গে গত ১ নভেম্বরও কলকাতার পিজি হাসপাতালে দেখা করে এলাম আমি। গল্প করলাম। তিনি আর নেই। ভাবতে পারছি না। বাংলার কংগ্রেস রাজনীতির ত্রিমূর্তি― প্রিয়, সুব্রত, সোমেন। এক এক করে চলে গেল। বিধায়ক হিসেবে অসাধারণ ছিলেন সুব্রতদা। এক জন দক্ষ প্রশাসক, এক জন হাসিখুশি, খোলামেলা বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।’’
সুব্রতের স্মৃতিচারণায় সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, ‘‘একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। তখন কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলির একটি সভায় দেখেছিলাম, কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র প্রতিনিধি হয়েও উনি বলিষ্ঠ ভাবে কেন্দ্রের নানা শ্রমিক-বিরোধী নীতির সমালোচনা করেছিলেন। এমনই ছিল তাঁর রাজনীতি।’’
বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওঁর ভাবমূর্তি সত্যিই অন্যরকম ছিল। সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়!’’