Siliguri Corridor

‘চিকেন’স নেক’ই ছিল জঙ্গি-নিশানা রহমানি ছাড়া পেতেই ছক, গোয়েন্দা তথ্য

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার অসম পুলিশের এসটিএফ অসম, কেরল এবং এ রাজ্য থেকে আট জঙ্গিকে ধরেছে। যাদের মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার মিনারুল শেখ ও মহম্মদ আব্বাস আলি। তাদের সম্পর্কে আগে থেকেই তথ্য ছিল রাজ্য পুলিশের এসটিএফের কাছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০৭

— প্রতীকী চিত্র।

নিশানা সেই চিকেন’স নেক।

Advertisement

বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন ‘আনসারুল্লা বাংলা টিম’ বা এবিটি (আল কায়দার উপমহাদেশীয় শাখা) এ রাজ্যে ‘স্লিপার সেল’ তৈরি করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, গোপনে সংগঠন বাড়ানোর পাশাপাশি শিলিগুড়ি করিডর ‘চিকেন’স নেক’-এ নাশকতা চালানো। এই তথ্য জানিয়ে শুক্রবার ভবানী ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার দাবি করেন, অসম পুলিশের হাতে যে আট জন এবিটি-র সদস্য গ্রেফতার হয়েছে, তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে, পাশাপাশি স্লিপার সেলের মাধ্যমে গোপনে অস্ত্র সংগ্রহ করে ভারত-বিরোধী কাজকর্মে সক্রিয় হয়ে ওঠাও ছিল তাদের লক্ষ্য। স্থানীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে অস্ত্র জোগাড়ের কাজে নামাতেও চেষ্টা করছিল তারা।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার অসম পুলিশের এসটিএফ অসম, কেরল এবং এ রাজ্য থেকে আট জঙ্গিকে ধরেছে। যাদের মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার মিনারুল শেখ ও মহম্মদ আব্বাস আলি। তাদের সম্পর্কে আগে থেকেই তথ্য ছিল রাজ্য পুলিশের এসটিএফের কাছে। রাজ্য পুলিশের সাহায্যেই অসম পুলিশ তাদের ধরেছে। তার পরেই পুলিশ জানিয়েছে, অসমের মতো এ রাজ্যেও এবিটি-র স্লিপার সেল সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। যাদের উদ্দেশ্য ছিল, ভারতে নাশকতামূলক কাজে নামতে যুবকদের উদ্বুদ্ধ করা। এর জন্য তারা বেছে নিয়েছিল মুর্শিদাবাদ ও আলিপুরদুয়ারকে। দু’টি জায়গাতেই স্থানীয় যুবকদের সংগঠনে এনে কাজে লাগানো হচ্ছিল। তবে, কত জনকে তারা নিজেদের সংগঠনে নিয়ে এসেছিল, তা জানেন না গোয়েন্দারা। এবিটি-র প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পট পরিবর্তনের পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়েই ভারত-বিরোধী কাজকর্ম শুরু করেছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। তারই নির্দেশে জঙ্গি মহম্মদ শাদ রাডি এ দেশে ঢুকে সংগঠনের কাজ শুরু করে বলেই তথ্য রয়েছে তাঁদের কাছে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মহম্মদ শাদকে কেরল থেকে ধরে অসম পুলিশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশের একাধিক নেতা ‘চিকেন’স নেক’কে নিশানা করার কথা বলেছেন। এমনকি, সে দেশের কয়েক জন ধর্মীয় নেতা ‘চিকেন’স নেক’ দখল করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যকে দখল করার কথাও বলেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিরাপত্তার দিক থেকে ‘চিকেন’স নেক’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেখানে জঙ্গি কাজকর্ম বৃদ্ধি পেলে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তা চিন্তার। এ দিন শিলিগুড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে এই কথা উল্লেখ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। একটি সূত্রের দাবি, এ সব কারণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাংলাদেশ থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে এ রাজ্যে ঢুকেছিল মহম্মদ শাদ রাডি।

সেই সময়ে তার সঙ্গে একাধিক বার দেখা করেছিল মিনারুল ও আব্বাস। সে ভারতে ঢোকার পরে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা, জলঙ্গি এবং আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় একাধিক বৈঠক করেছে স্লিপার সেল।

আব্বাসের গ্রেফতারির পরে বাড়িছাড়া ছিলেন তার স্ত্রী ও মা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁরা নিশ্চিন্তপুরের বাড়িতে ফিরেছেন। শুক্রবার সকালে আব্বাসের স্ত্রী বলেন, “মাদ্রাসায় পড়িয়ে, আদায় করেই সংসার চলত। ও কোনও খারাপ চক্রে জড়িত নয়। ওকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। চার বছরের ছেলেকে নিয়ে কী করব, বুঝতে পারছি না।”

৪৪ বছরের মিনারুল শেখ পাম্পসেট সারাইয়ের কাজ করত। পরিবারের দাবি, সে নিরক্ষর। তার বাড়ি থেকে একটি স্মার্টফোন, পেনড্রাইভ এবং একাধিক বই ও নথি বাজেয়াপ্ত করেছে অসম এসটিএফ। আব্বাসের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে মিনারুলের ছোট ছেলে। সেই সূত্রেই আব্বাসের সঙ্গে তার যোগাযোগ, দাবি পরিবারের। সূত্রের দাবি, আব্বাসের মাদ্রাসায় যাতায়াত ছিল মিনারুলের। পাম্পসেট সারাইয়ের পাশাপাশি অসম থেকে পেঁয়াজের বীজ এনে এলাকার চাষিদের কাছে বিক্রি করত মিনারুল। সেই সূত্রেই অসমে যোগাযোগ তৈরি হয় তার। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এর আগেও একাধিক বার অসম থেকে মিনারুলের বাড়িতে লোক এসেছিল। যদিও তা অস্বীকার করেছে মিনারুলের পরিবার। সূত্রের দাবি, একটি ওয়টস্যাপ গ্রুপে যুক্ত ছিল মিনারুল ও আব্বাস। মোবাইল ঘেঁটে এই সংক্রান্ত তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

সূত্রের দাবি, অসম থেকে ধৃত নুর ইসলাম মণ্ডল ও মাজিবুর রহমান ঘন ঘন মুর্শিদাবাদ ও জলপাইগুড়িতে যেত। তারা মিনারুল বা আব্বাসের বাড়িতেও যেত কি না, জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। স্থানীয়দের দাবি, ব্যবসায়িক কারণে অসমে মিনারুলের যাতায়াত থাকলেও কোনও নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে সে যুক্ত নয়। মিনারুলের স্ত্রী টগরা বিবি বলেন, “আমার স্বামী নিজের কাজ নিয়েই পড়ে থাকে। কোনও অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত নয়।”

এবিটি-র আট জঙ্গিকে পাকড়াও করার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জায়সওয়াল এ দিন বলেছেন, “জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে কোনও বিষয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই। এই ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সংস্থা তা-ই করেছে।’’ তার পরে তিনি যোগ করেন, ‘‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। সম্প্রতি বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ মঞ্চে সমস্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।”

Advertisement
আরও পড়ুন