CM Mamata Banerjee in Alipurduar

‘পাচারকারীদের গুলি করে মারা হবে, এ কোন ভাষা?’ মমতার প্রশ্নে কী ব্যাখ্যা বন দফতরের

ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট নিজেদের কী ভাবে? ভগবান জানে! নিজেদের মতো প্ল্যান করে এরা। নিজেদের মতো অ্যাকশন করে। সাধারণ মানুষ তো এটা বুঝবেন না।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৩২
আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

‘পাচারকারীদের গুলি করে মারা হবে’! আলিপুরদুয়ারে যে গেস্ট হাউসে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, সেখানে কোনও একটি জায়গায় এমন একটি পোস্টার দেখে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ছবি তুলেছেন তিনি। বুধবার আলিপুরদুয়ারে প্রশাসনিক বৈঠকে ফোন তুলে ধরে ওই ছবি দেখিয়ে মমতার মন্তব্য, ‘‘এটা কোনও ভাষা!’’ তিনি অবিলম্বে ওই নির্দেশিকা সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

প্রশাসনিক বৈঠকে বন দফতরের কাজকর্ম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘এই ছবিটা আমি গেস্ট হাউস থেকে তুলে আনলাম।’’ মোবাইলে সেই ছবি দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘হনুমানগুলোকে থ্যাংকস। ভাগ্যিস একটা কাপড় ছিঁড়ে দিয়েছিল। তাই দেখতে পেলাম। এখানে লেখা ‘পাচারকারীদের ধরলে গুলি করে মারা হবে’। এটা কোনও ভাষা হল! আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটা বলো।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অনেক সময় সাধারণ মানুষ, যাঁরা জানেন না, জঙ্গলের রাস্তার মধ্যে দিয়ে গেলে তাঁদের উপর অত্যাচার হয়। আলিপুরদুয়ারের ডিএফও যাঁরা আছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলি, ভুলে যদি কেউ চলে যান, আপনারা ‘স্ট্রং অ্যাকশন’ করেন। যেটা মানুষের পছন্দ নয়।’’

পরে বন দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, এমন নির্দেশিকা তারা দেয়নি। বায়ুসেনার তরফ এমন পোস্টার লাগানো হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সে ক্ষেত্রে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। সরকারি জমিতে এমন নির্দেশনামা লেখা পোস্টার দেওয়া ঠিক নয়।

এখানেই শেষ নয়। আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল অভিযোগ করেন, রাজাভাতখাওয়ায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে মোটা টাকা ‘ফি’ নেওয়া হয়। গাড়ি নিয়ে এলে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ হয় পর্যটকদের। এতে রাজাভাতখাওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন, বলে আশঙ্কা করেন বিধায়ক। যার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট নিজেদের কী ভাবে? ভগবান জানে! নিজেদের মতো প্ল্যান করে এরা। নিজেদের মতো অ্যাকশন করে। সাধারণ মানুষ তো এটা বুঝবেন না। তাঁরা তো আমাদের দোষ দেবেন।’’ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন, ‘‘সরকারকে জানাবে তো! এটা কি জমিদারি না কি? ফরেস্ট (বন দফতর) কি সরকারের বাইরে?’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, পর্যটকদের কোনও ‘ফি’ দিতে হবে না। ক্যাবিনেট মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত হবে। বক্সায় হোমস্টে, রিসর্ট, হোটেল নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘কে বাড়িতে হোমস্টে করবে, সেটা তার সিদ্ধান্ত। এখানে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের কোনও আপত্তি থাকতে পারে না।’’ আবার পাহাড় এবং জঙ্গল এলাকায় বড় বড় বাড়ি তৈরি করতে কী ভাবে স্থানীয় প্রশাসন ছাড়পত্র দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

আলিপুরদুয়ার থেকে আবারও কাটমানি ইস্যু নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘২৮ লক্ষের মধ্যে ১২ লক্ষ বাড়ির টাকা ছাড়া (অ্যাকাউন্টে পাঠানো) হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের টাকা যে-ই চাইবে, তার বিরুদ্ধে এফআইআর হবে। অ্যাকশন হবেই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, প্রশাসনের বেশ কিছু কাজ দায়সারা ভাবে হচ্ছে। জেলাশাসক থেকে সাংসদ— সবাইকে সক্রিয় হতে বলেন তিনি। বিডিও-দের এলাকায় এলাকায় যেতে বলেন। মমতার বার্তা, ‘‘সঠিক সময়ে কাজটা করুন। এখান থেকে সব জেলাকে বলছি, ২৮ লক্ষের মধ্যে ১২ লক্ষ বাড়ির (আবাস প্রকল্প) টাকা ছাড়া হয়েছে। সরকারি প্রকল্পে টাকাপয়সা যে চাইবে, তার বিরুদ্ধে এফআইআর হবে। অ্যাকশন হবেই... অন্য দিকে মন না-দিয়ে কাজে মন দিতে হবে। এক জন ভাল কর্মীকে সবাই মনে রাখে। মানুষের অভিযোগ নিয়েও যদি কোনও পদক্ষেপ না করেন, মনে করবেন না আমরা ভুলে গিয়েছি। থার্ড পার্টি দিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়।’’

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ প্রশাসনিক বৈঠকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো দ্রুত কাজ চলছে। তিনি বলেন, ‘‘২০১১ সাল থেকে ৩৩৩টি কাজ ধরেছিলাম। ৩০২টি কাজ শেষ। ৩১টি কাজ চলছে। দ্রুত গতিতে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে।

Advertisement
আরও পড়ুন