শিশির অধিকারী। —ফাইল চিত্র ।
এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটির ভোটাভুটিতে যোগ দিতে এসে ‘চোর-চোর’ স্লোগান শুনতে হল কাঁথির তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীকে। সেই স্লোগান দিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। এ সব শুনে শিশির বললেন, এর ফল ভোগ করতে হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি জানান, তাঁর পরিবারের সদস্যরা চোর বা ডাকাত নন। তা সত্ত্বেও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তার ফল মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারকে ভুগতে হবে। সোমবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর বাবার সমর্থনে তাঁর পাশে দাঁড়ান বিজেপি সমর্থকেরা। ‘চোর চোর’-এর পাল্টা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলেন তাঁরা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, পুলিশকর্মীরা এসে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেন।
বস্তুত, শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পর থেকেই শিশিরের সঙ্গেও দলের দূরত্ব বেড়েছে। বর্তমানে তৃণমূলের কোনও সভায় তাঁকে অংশ নিতে দেখা যায় না। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও শিশির সক্রিয় ছিলেন না। তৃণমূলের অভিযোগ, দলে থেকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। শিশির তৃণমূলের সাংসদ হলেও আদতে বিজেপিকে সমর্থন করছেন বলেও কাঁথির তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি। আর সেই কারণেই মঙ্গলবার তিনি এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে অংশগ্রহণ করতে এলে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের রোষের মুখে পড়েন। শিশিরকে দীর্ঘ দিন বাদে জনসমক্ষে দেখতে পেয়েই তৃণমূল কর্মীরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েন। ‘চোর চোর’ স্লোগান তুলে শিশিরকে কটাক্ষ করতে দেখা যায় তৃণমূলের কর্মীদের। যদিও এই প্রসঙ্গে শিশির বলেন, “শুভেন্দু দল ছাড়ার পর থেকেই আমার পরিবার টার্গেট হয়ে গেছে। আমার পরিবারের কেউ চোর বা ডাকাত নয়। আমরা মানুষের পাশে থেকেই রাজনীতি করি।’’
শিশিরের অনুযোগ, “আমার পরিবারকে টার্গেট করা হচ্ছে। ভূরি ভূরি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।’’ শিশির আরও বলেন, “দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ধরে কাঁথি লোকসভা এলাকার পাশাপাশি গোটা পূর্ব মেদিনীপুরে উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ। কেলেঘাই নদী সংস্কারের কাজও এগোয়নি। রাস্তাঘাট উন্নয়ন সব স্তব্ধ।’’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এগরা ২ ব্লকে সমান সমান আসন পেয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি। পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি পেয়েছে ১২টি করে আসন। বোর্ড গঠন হয়েছে লটারির মাধ্যমে। সভাপতি তৃণমূলের হলেও সহ-সভাপতি বিজেপির। এই পরিস্থিতিতে সমিতির স্থায়ী কমিটির বোর্ড গঠন নির্ভর করে বিধায়ক এবং সাংসদদের ভোটের উপর। এগরা-২ পঞ্চায়েত সমিতি মেদিনীপুর লোকসভার মধ্যে হওয়ায় ভোট দিতে আসেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। ভোটাভুটিতে অংশ নিয়েছিলেন এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতিও। আবার এগরা ২-এর বাথুয়ারি গ্রাম পঞ্চায়েত উত্তর কাঁথি বিধানসভার মধ্যে। তাই কাঁথি লোকসভার সাংসদ শিশির এবং উত্তর কাঁথির বিজেপি বিধায়ক সুমিতা সিংহ ভোটে অংশগ্রহণ করেন। পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী কমিটির বোর্ড গঠনে শিশির-সহ বাকি সাংসদ এবং বিধায়কদের ভোট যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভোট দিতে এসেই ‘চোর-চোর’ স্লোগান শুনতে হল শিশিরকে।