সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে মেদিনীপুর মেডিক্যালে অবস্থান বিক্ষোভ জুনিয়র ডাক্তারদের। —নিজস্ব চিত্র।
সাসপেনশন তোলার দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন সাসপেন্ড (নিলম্বিত) হওয়া মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সাত জুনিয়র ডাক্তার। তার পরই হাসপাতালে অবস্থান বিক্ষোভ তোলার সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখছেন তাঁরা। মিলবে সুরাহা। বুধবার থেকেই মেদিনীপুর মেডিক্যালে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে।
স্যালাইন-কাণ্ডে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সাত জুনিয়র ডাক্তারকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করার পর থেকেই উত্তপ্ত হাসপাতাল চত্বর। দাবি, ডাক্তারদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করতে হবে। সেই দাবিকে সামনে রেখে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থান-বিক্ষোভও। সাসপেন্ড হওয়া সাত জুনিয়র ডাক্তার চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক আধিকারিককেও সাসপেনশন প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। শনিবার রাত থেকে অবস্থান-বিক্ষোভ চালাচ্ছেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। তবে এক সঙ্গে সব জুনিয়র ডাক্তারেরা অবস্থানে বসেননি। রোগী পরিষেবার কথা মাথায় রেখেই চলছে ‘রিলে’ অবস্থান। পরিষেবা দিয়ে বা ডিউটি শেষ করে জুনিয়র ডাক্তারেরা এসে বসেন অবস্থান মঞ্চে। মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা জানান, বুধবার সকাল থেকেই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্বাভাবিক পরিষেবা দিতে যাবেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিম্নমানের স্যালাইন ব্যবহার, প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। ঘটনার পরই স্বাস্থ্য দফতর পদক্ষেপ করে। তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তভার দেয়। এমনকি, রাজ্য সরকার ওই ঘটনায় সিআইডি তদন্তেরও নির্দেশ দেয়। তার পরই ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তাঁদের মধ্যে সাত জন জুনিয়র ডাক্তার। এ সব নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁদের সহকর্মীরা। শনিবার তাঁরা ঘেরাও করেন হাসপাতালের সুপার, অধ্যক্ষ এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ)-কে। এর পরেই তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ বসেন।
প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পাঁচ প্রসূতি। অভিযোগ, স্যালাইন নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। পরে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে অসুস্থ হয়ে পড়া প্রসূতিদের এক জনের সন্তানও প্রাণ হারায়। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার চিকিৎসকদের দিকে আঙুল তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পরেও ওই প্রসূতি এবং শিশুকে বাঁচানো যায়নি। কারণ, চিকিৎসকেরা তাঁদের কর্তব্য পালন করেননি। এর পর কর্মবিরতির পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই স্ত্রী রোগ এবং অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের ২২ জন জুনিয়র ডাক্তার কর্মবিরতি শুরু করেন হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে। শুক্রবার প্রায় ন’ঘণ্টা জিবি (জোনারেল বডি) বৈঠক হয়। বৈঠকের শেষে জুনিয়র ডাক্তারেরা জানান, মানবিকতার কারণে কর্মবিরতি ঘোষণা থেকে সরেছেন। তবে আংশিক কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন তাঁরা। ভবিষ্যতে পূর্ণ কর্মবিরতিতেও যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।