Akhil Giri

কুবচনে অবশেষে ‘দুঃখিত’ অখিল, তবে বিবাদের সব দায় চাপিয়ে দিলেন সেই মহিলা রেঞ্জারের ঘাড়েই

শনিবার অখিলের আচরণ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। মহিলা আধিকারিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। সেই ঘটনায় অবশেষে ‘অনুতাপ’ প্রকাশ করলেন মন্ত্রী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ১৩:৩১
(বাঁ দিকে) রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি মন্ত্রী অখিল গিরি। —নিজস্ব চিত্র। সেই মহিলা বন আধিকারিক (ডান দিকে)।—ফাইল চিত্র।

(বাঁ দিকে) রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি মন্ত্রী অখিল গিরি। —নিজস্ব চিত্র। সেই মহিলা বন আধিকারিক (ডান দিকে)।—ফাইল চিত্র।

তাজপুরে মহিলা বন আধিকারিকের উদ্দেশে কুকথা বলায় অবশেষে অনুতপ্ত রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। তিনি স্বীকার করে নিলেন, মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল সদস্য হিসাবে মহিলা বনকর্মীর সঙ্গে ওই আচরণ করা তাঁর উচিত হয়নি। এর জন্য তিনি দুঃখপ্রকাশও করেছেন। তবে নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত হলেও অখিল গোটা ঘটনার দায় চাপিয়েছেন সেই আধিকারিকের উপরেই। বন দফতরের ওই আধিকারিকের ব্যবহারের কারণেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বলে মনে করেন তিনি।

Advertisement

শনিবার অখিলের আচরণ নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। মহিলা আধিকারিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, নিজের আচরণের জন্য এতটুকুও অনুতপ্ত নন। অখিলের বক্তব্যের সমালোচনা করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। দল যে তাঁর পাশে নেই, তা বোঝা গিয়েছিল। এমনকি, খোদ মুখ্যমন্ত্রীও অখিলের আচরণে বিরক্ত বলে শোনা গিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে রবিবার অখিল বলেন, ‘‘তাজপুরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। মন্ত্রী হিসাবে আমি আলোচনা করতে বলেছিলাম। নিজেও উত্তেজিত হয়ে পড়ি। বন আধিকারিককে আমি যে কথা বলেছি, তা অনুচিত। মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল সদস্য হিসাবে ওই কথা আমার বলা ঠিক হয়নি। পরবর্তী কালে তার জন্য আমি দুঃখও পেয়েছি। আমি এই কথা বলার জন্য অনুতপ্ত।’’ কুণালের সমালোচনা প্রসঙ্গে অখিল যোগ করেন, ‘‘উনি দলের মুখপাত্র। দলের কথা জানিয়েছেন। আমি আমার কথা জানালাম।’’

এর পরেই ঘটনার দায় রেঞ্জারের উপর চাপান অখিল। বলেন, ‘‘রেঞ্জার মনীষা সাউ কারও কথা শোনেননি। তাঁর জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে দিন আমি ওখানে গিয়ে সামাল না দিলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেত। গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। এই রেঞ্জারকে জেলা প্রশাসনের কেউ পছন্দ করেন না।’’

সে দিন ঠিক কী ঘটেছিল? ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অখিল বলেন, ‘‘গত কাল তাজপুরের বন দফতরের জমিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য দায়ী রেঞ্জার। ওঁর কাজকর্মে বুধবার রাতে সেখানকার ২২ জন দোকানদার বিপদে পড়েছিলেন। তাঁদের জলের তলায় চলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। রাতে রেঞ্জারের উপস্থিতিতে এবং নির্দেশে করাত নিয়ে ২০-২৫ জন বনকর্মী সব দোকান কেটে দিয়েছেন। বাঁশ, ত্রিপল ভেঙেচুরে দিয়েছেন। গ্রামের লোকেরা তাঁদের দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন। আমি তখন বিধানসভায়। শনিবার বিধানসভা থেকে ফিরে আমি সেখানে যাই। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামবাসী আমার সঙ্গে জড়ো হয়েছিলেন।’’

অখিল আরও বলেন, ‘‘গ্রামের লোকজন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ওই এলাকায় দোকান চালাচ্ছেন। আমি শুধু বলেছিলাম, সমুদ্রের ভাঙনের হাত থেকে দোকান রক্ষা করতে বন দফতরের জমির উপরে দোকান নিয়ে তাঁরা ২০ ফুট পিছিয়ে আসবেন। বাঁধ সারানো হলে আবার ফিরে যাবেন। এটা ডিএফওকে আমি বলেছিলাম। রেঞ্জার তাতে বাধা দেন। তিনি গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে গ্রামের লোকজনকে গুণ্ডা বলেছেন। তাঁরা রেঞ্জারকে বলেছেন, গুণ্ডাদের পয়সায় আপনি বেতন পান।’’

অন্য দিকে, অখিলের হুঁশিয়ারির পরেও শনিবার সারা রাত তাজপুর সৈকত লাগোয়া বন দফতরের জায়গায় পাহারা দিয়েছেন বনকর্মীরা। ফলে অস্থায়ী দোকানদারেরা ওই এলাকায় ঘেঁষতে পারেননি। যা নিয়ে এলাকা এখনও থমথমে।

আরও পড়ুন
Advertisement