সেফ আলি খান। —ফাইল চিত্র।
প্রাণপণে ছুটে আসা অটোরিকশাটা ভোররাতের লীলাবতী হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। রক্তে ভেসে যাওয়া একটা চেহারা এ বার অটো থেকে নামে। আশেপাশে চলে আসা হাসপাতালের রক্ষী আর কর্মীদের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘‘দয়া করে একটা স্ট্রেচার আনুন। আমি সেফ আলি খান!’’
ঘটনাটা বলছিলেন ভজন সিংহ রানা। মুম্বইয়ের এই অটোচালকের সঙ্গে গত চব্বিশ ঘণ্টায় কত জন সাংবাদিক কথা বলেছেন, গুনতে বসলে তালিকা দীর্ঘ হবে। বুধবার রাতে নিজের বাড়িতে দুষ্কৃতীর ছুরিতে রক্তাক্ত সেফ আলি খানকে ভজনের অটোতেই লীলাবতী হাসপাতালে আনা হয়েছিল। আর সেই হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত ভজন বুঝতেই পারেননি, এতক্ষণ তাঁর অটোর পিছনের আসনে বসে থাকা জখম ব্যক্তিটি আসলে কে! আসলে খেয়াল করার ফুরসতই হয়নি তাঁর।
বুধবার রাত তখন আড়াইটে-তিনটে হবে। বান্দ্রা লিঙ্কিং রোডের গলি ধরে অটো চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভজন। সেফ-করিনার বাসভবন সৎগুরু শরণ অ্যাপার্টমেন্টের কাছ দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ দেখেন, সামনে এক মহিলা। চিৎকার করছেন, ‘‘রিকশা! রিকশা!’’ বলে। তত ক্ষণে সেফের বহুতলের ফটক থেকেও কয়েক জন ডাকছেন ভজনকে। গেট পেরিয়ে একটু এগিয়েই গিয়েছিলেন ভজন। ডাকাডাকি শুনে ইউ-টার্ন করে এসে বহুতলের দরজায় অটো থামান।
ভজন বলছিলেন, ‘‘এর পর দু’চার জন বেরিয়ে এলেন। তাঁদের মধ্যে এক জনের সাদা কুর্তা-পাজামা পুরো রক্তে মাখামাখি। ওঁদের বললাম অটোয় বসতে। আহত লোকটির সঙ্গে সাত-আট বছরের একটা বাচ্চা ছিল, অল্পবয়সি এক তরুণও ছিলেন। আমাকে বললেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে চলো।’ কিছুটা এগিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘স্যর, হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালে যাব, না লীলাবতী? সেফ (তখনও যাঁকে চিনতে পারেননি ভজনলাল) বললেন, লীলাবতী। আমি ওঁদের সোজা লীলাবতীতে নিয়ে এলাম।’’
গোটা সময়টায় বুঝতেই পারলেন না যে, সেফ আলি খানকে আপনি নিয়ে আসছেন? ভজন বলছেন, ‘‘নাহ্, বুঝতে পারিনি। দেখেছিলাম, প্রচণ্ড চোট লাগলে যেমন হয়, সে রকম অবস্থার এক জনকে আমার অটোয় তোলা হচ্ছে। ঘাবড়েও গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, হয়তো মারামারি হয়েছে। কেমন যাত্রী তুললাম কে জানে। মারপিট হয়ে থাকলে আমি নিজে ঝামেলায় পড়ব না তো? এ সবই মনে হচ্ছিল। তা আমি দ্রুত ওঁদের পৌঁছে দিলাম। ওঁরা হাসপাতালে নেমেই সেখানকার রক্ষীকে ডাকলেন। রক্ষীকে বললেন, অন্য কর্মীদের ডেকে আনতে। আর তখনই উনি বললেন, ‘আমি সেফ আলি খান’।’’
করিনা ওই সময়ে ছিলেন সেফের সঙ্গে? খেয়াল করেননি ভজন। তাঁর সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘‘ভিড়ের মধ্যে কী হয়, দেখেননি? লোকের তখন আর নজর থাকে না, করিনা আছে, না কে আছে। আমি তো সেফকেই চিনতে পারিনি। বরং ভয়ে ভয়ে ভাবছিলাম, রক্তমাখা একটা লোককে নিয়ে যাচ্ছি। আবার এই চক্করে পড়ে না যাই।’’ ঠিক কোথায় কোথায় লেগেছিল সেফের? ভজনের আবার এক উত্তর— ‘‘খেয়াল নেই। তবে ডান কাঁধের কাছটায় একটা জখম ছিল। আর উনি নামার পরে দেখলাম, পিঠে রক্ত।’’
ভজন জানালেন, আজ এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। রুজি-রুটির চিন্তায় দিন পার করা অটোচালক তো পুলিশি ঝামেলারই ভয় পাচ্ছিলেন গোড়া থেকে।নিজের রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতার কথা ক্রমাগত শোনাতে শোনাতেওকোনও শিহরণও জাগাচ্ছে না তাঁর। নির্লিপ্ত গলায় ভজন সিংহ রানা বলছেন, ‘‘আমি ওঁদের পৌঁছে দিয়েছিলাম, এটুকুই।’’