(বাঁ দিকে) বর্ষশেষে দিঘায় উপচে পড়েছে পর্যটকদের ভিড়। (ডান দিকে) পর্যটকদের জন্য প্রমোদের আয়োজন (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তার পরেই শুরু হয়ে যাবে ইংরেজি নতুন বছরের আবাহন। বর্ষবরণের রাতে সেজে উঠেছে দিঘার হোটেল এবং রিসর্টগুলি। বিস্তীর্ণ সৈকত জুড়ে থাকছে অনুষ্ঠান, হুল্লোড়ের নানা আয়োজন। বছরের শেষ দিন কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়েছে দিঘায়। ছোট-বড়, সব হোটেলই মঙ্গলবার ভর্তি। বিপুল ভিড় সামাল দেওয়া এবং নিরাপত্তার খাতিরে প্রচুর সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। কোনও রকম দুর্ঘটনা রুখতে সমুদ্রপারে অতিরিক্ত নুলিয়া রেখেছে জেলা প্রশাসন।
পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরের আগমনের সন্ধিক্ষণে প্রতি বছরই দিঘায় পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট থাকে। এ বারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দিঘার হোটেলগুলির অধিকাংশ ঘরই ‘বুকড্’। মন্দারমণির অধিকাংশ হোটেলই ভর্তি। আমোদপ্রিয় পর্যটকেরা যে ভাবে ভিড় জমাচ্ছেন, তাতে রাতে দিঘায় পা ফেলার জায়গা পাওয়া দুষ্কর হবে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। প্রশাসনিক উদ্যোগে এ বার দিঘায় বর্ষবরণের কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়নি। তবে বেশির ভাগ হোটেল নিজেদের উদ্যোগে পর্যটকদের মনোরঞ্জনের বিবিধ আয়োজন করেছে। দিঘা ছাড়াও মন্দারমণির হোটেল, রিসর্টে থাকছে আকর্ষণীয় ‘অফার’, সামুদ্রিক মাছ এবং কাঁকড়ার বিবিধ পদের ভূরিভোজের বন্দোবস্ত।
বছরের পয়লা দিন ছুটি। তাই বুধবার পর্যটকের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। আবার নতুন বছর থেকে দিঘার জন্য গুচ্ছ নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী বছরের ৩০ এপ্রিল প্রতীক্ষিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের আগে সমগ্র দিঘা শহরকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। প্রথম লক্ষ্য, দিঘাকে পরিচ্ছন্ন শহর হিসাবে গড়ে তোলা। গত তিন দিন আগে এ নিয়ে দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, ডিএসডিএ এবং জেলাশাসক বৈঠকে বসেন। তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে দিঘার রাস্তায় কোনও ভাবেই আবর্জনা পড়ে থাকবে না। হোটেলগুলিকে বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট প্লাস্টিকের ডাস্টবিন দেওয়া হবে। সেই ডাস্টবিনগুলো থেকে নিয়মিত আবর্জনা তুলে নিয়ে যাবে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের কর্মীরা। কোনও হোটেল যদি এ ক্ষেত্রে অনিয়ম করে শাস্তি হিসাবে গুনতে হবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা। পাশাপাশি আরও কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। আবার বর্জ্য তোলায় গড়িমসি করলে ডিএসডিএ-র কাছেও অভিযোগ জানাতে পারবেন যে কেউ। পর্যটক বা হোটেল ব্যবসায়ীরা কোনও সমস্যায় পড়লে অভিযোগ জানানোর জন্য ৭৫০১২৯৫০০১ নম্বরে হোয়াট্সঅ্যাপ করা যাবে। শুধু তা-ই নয়, এখন থেকে পর্যটকেরা হোটেলে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের বিবিধ তথ্য ‘অতিথি’ পোর্টালে আপডেট করতেই হবে। সেই তথ্য অনুসারে পর্যটকদের মাথাপিছু নির্ধারিত ট্যাক্স নেবে ডিএসডিএ। হিসাবে গরমিল হলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে হোটেলগুলির। দিতে হবে হোটেলগুলিকে।
দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে হোটেলগুলিতে যে পরিমাণ পর্যটক আনাগোনা করছেন, তাঁদের মাথাপিছু করের বকেয়া টাকা সরকারি পোর্টালে দিতে হবে। ১ জানুয়ারি থেকে ‘অতিথি’ পোর্টালে পর্যটকদের নাম অবশ্যই নথিভুক্ত করতে হবে। সেই পরিমাণ পর্যটকের জন্য নির্ধারিত ট্যাক্সের টাকা ডিএসডিএ-কে প্রদান করতে হবে। কেউ সংখ্যায় গরমিল করলে তাঁকে প্রতি পর্যটকপিছু ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।’’ হোটেল ব্যবসায়ী পরমেশ চন্দ্রের কথায়, “আমরা হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে সহমত হয়েছি। সবাই মিলে ঠিক ভাবে ট্যাক্স দিলে দিঘার সার্বিক উন্নয়ন হবে। ‘অতিথি’ পোর্টালে সব হোটেল তথ্য আপডেট করছে না। ওল্ড দিঘা এবং নিউ দিঘার কিছু হোটেল এই নিয়ম মানলেও সবাই মেনে চলছে না। দিঘাকে পরিষ্কার রাখার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।’’