Uttarakhand

Landslide: ফিরলেন অনেকেই, বর্ষণবিধ্বস্ত হিমাচল-উত্তরাখণ্ডে এখনও নিখোঁজ সাত বাঙালি-সহ ১১ জন

উত্তরকাশী জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা অফিসার দেবেন্দ্র পটোয়াল জানান, আট ট্রেকার ও তিন রাঁধুনির দলটি ১১ অক্টোবর হরশিল থেকে ছিটকুলের পথ ধরে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ ০৫:৩৮
আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বুধবার নৈনিতালে।

আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করে নিয়ে আসছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বুধবার নৈনিতালে। ছবি পিটিআই।

উত্তরাখণ্ড এবং লাগোয়া হিমাচল প্রদেশে দুর্যোগের দাপট কমে এলেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া ভ্রমণার্থী ও ট্রেকারদের ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না। হিমাচলে ‘ট্রেক’ বা পাহাড় পরিক্রমার উদ্দেশ্যে বেরোনো বাংলার সাত ও দিল্লির এক জন ট্রেকার এবং তাঁদের তিন রাঁধুনির খোঁজ নেই। তবে দুর্যোগ-দুর্ভোগ পেরিয়ে বঙ্গের অন্য কয়েকটি দলের কেউ কেউ দিল্লি হয়ে বিমানে কলকাতায় ফিরেছেন, কেউ কেউ ফেরার ট্রেন ধরেছেন কাঠগোদামে।

উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা অফিসার দেবেন্দ্র পটোয়াল জানান, আট ট্রেকার ও তিন রাঁধুনির দলটি ১১ অক্টোবর হরশিল থেকে ছিটকুলের পথ ধরে। ১৯ তারিখে তাদের ছিটকুলে পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু না-পৌঁছনোয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে খবর দেন ট্রেকিংয়ের উদ্যোক্তারা। হেলিকপ্টার নিয়ে খোঁজখবর ও উদ্ধারের প্রস্তুতি চলছে। ওই দলে কলকাতা-সহ বাংলা থেকে যাঁরা আছেন, তাঁদের নাম মিঠুন দারি (৩১), তন্ময় তিওয়ারি (৩০), বিকাশ মাকাল (৩৩), সৌরভ ঘোষ (৩৪), রিচার্ড মণ্ডল (৩০), সাবিয়ান দাস (২৮) ও সুখেন মাঝি (৪৩)। দলের দিল্লিবাসিনী সদস্যার নাম অনিতা রাওয়ত (৩৮)। রাঁধুনি হিসেবে দলে আছেন উত্তরকাশীর পুরোলা এলাকার দেবেন্দ্র (৩৭), জ্ঞানচন্দ্র (৩৩) এবং উপেন্দ্র (৩২)।

Advertisement

উত্তরাখণ্ডে পাহাড়ি ধসে আটকে পড়েছেন বাগনানের পাঁচ জন। গত পঞ্চমীতে এনডি ব্লকের ওই পাঁচ বাসিন্দা গাড়িতে নৈনিতাল রওনা হন। স্বজন ও পড়শিদের সঙ্গে প্রতিদিন কথা হলেও মঙ্গলবার বেলা ১২টার পর থেকে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। ফোনে শেষ বার কথা বলার সময় ওই ভ্রমণার্থীরা জানিয়েছিলেন, ধস নামায় পিথোরাগড়ে আটকে পড়েছেন তাঁরা। মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ না-করায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

হুগলির অন্তত ২১ জন ভ্রমণার্থী আটকে পড়েছেন উত্তরাখণ্ডে। বিনসরে আটকে আছেন উত্তরপাড়ার একটি পরিবারের ছ’জন। উত্তরপাড়া ও কোন্নগরের আরও ১২ জন রয়েছেন জোশীমঠে। তাঁদের মধ্যে সুদীপ্তা পাঠক নামে এক পর্যটক মোবাইলে ভিডিয়োয় জানান, সেখানে বিদ্যুৎ নেই। খাবারে টান পড়েছে। তাঁদের রাত কেটেছে গাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবে ফিরব, বুঝতে পারছি না। খুব কষ্টে সময় কাটছে।’’ চুঁচুড়ার এক দম্পতি এবং তাঁদের মেয়ে আটকে রয়েছেন কেদারনাথে।

যাঁরা ভয়াবহ দুর্যোগ পেরিয়ে ঘরে ফেরার পথ ধরতে পেরেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা শিউরে ওঠার মতো। কখনও পাহাড়ের গা থেকে গাছ ভেঙে পড়ছে তো কখনও ভেঙে পড়ছে আস্ত পাহাড়, ধসের সঙ্গে খাদে পড়ে যাচ্ছে গাড়ি— হাড় হিম করা এমনই সব দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন তাঁরা। অবিশ্রান্ত বর্ষণের মধ্যেই রাত কেটেছে পাহাড়ি রাস্তায়। অনেক কষ্টে ট্রেনের অসংরক্ষিত কামরায় গুঁতোগুঁতি করতে করতে বুধবার কলকাতা রওনা দেন তাঁদের কয়েক জন।

বেলঘরিয়া, কালীঘাট, যাদবপুর থেকে ২২ জনের একটি দল উত্তরাখণ্ড ভ্রমণে বেরিয়েছিল ৯ অক্টোবর। দলে দু’টি শিশু এবং মহিলারাও ছিলেন। গন্তব্য নৈনিতাল, রানিখেত, কৌশানি, মুন্সিয়ারি-সহ উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্ত। সফর শেষ করে রবিবার আলমোড়া থেকে কাঠগোদামের দিকে রওনা দেন সবাই। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে চার ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা।

দলের প্রধান, বেলঘরিয়ার বাসিন্দা স্বরূপ কর ফোনে জানান, আলমোড়া ছাড়ার পরেই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করেছিল। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে চলছিল হালকা বৃষ্টি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি যে এত ভয়ানক হয়ে উঠবে, বুঝতে পারেননি তাঁরা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সন্ধ্যা নামার পরে দুর্যোগ আরও বাড়তে থাকে।

স্বরূপ বললেন, ‘‘সারা রাত গাড়িতে বসা। খাবার নেই। পানীয় জল নেই। অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যেই পাহাড় ভেঙে পড়ার শব্দ। যখন-তখন ভেঙে পড়ছে গাছ। তারই মধ্যে একটু একটু করে গাড়ি এগোচ্ছিল। ভয় করছিল খুব।’’ এর মধ্যেই খবর আসে, আগে একটি টেম্পো এবং একটি গাড়ি খাদে পড়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত সোমবার ভোরে সবাই পৌঁছন কাঠগোদাম স্টেশনে।

ওই দলেরই ভ্রমণার্থী, যাদবপুরের বাসিন্দা চন্দনা চক্রবর্তী জানান, কাঠগোদামে পৌঁছে তাঁরা স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু ট্রেনে ওঠার পরে ঘোষণা করা হয়, লাইনে জল দাঁড়িয়ে থাকায় ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এর পরে ওই দলের ন’জন দিল্লি রওনা দেন। সেখান থেকে তাঁরা বিমানে কলকাতায় ফেরেন। দলের বাকিরা বরেলী থেকে বুধবার ট্রেনে চেপেছেন।

রাজ্যের রেসিডেন্ট কমিশনারের দফতর সূত্রের খবর, এখনও বঙ্গ থেকে উত্তরাখণ্ডে যাওয়া ৭০ পর্যটকের কথা জানা গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে সরকার। আটক বঙ্গীয় পর্যটকেরা সুরক্ষিতই আছেন বলে খবর মিলেছে। যিনি যেখানে রয়েছেন, তাঁকে সেখানেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল হলে প্রত্যেককেই রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হবে। নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে উত্তরাখণ্ড সরকারের সঙ্গে।

দুর্গাসপ্তমীতে হাওড়া থেকে চার জন এবং কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০ জনকে নিয়ে উত্তরাখণ্ড গিয়েছিলেন হাওড়ার কোনার পর্যটন ব্যবসায়ী সীতানাথ কাঁড়ার। তার পরে গত রবিবার থেকে টানা তিন দিন ওই পাহাড়ি রাজ্যে বর্ষণ চলতে থাকায় অজস্র ধসে নামে, রাস্তায় আটকে পড়েন তাঁরা। কাচ্চিধাম নামক যে-জায়গায় তাঁরা আটকে ছিলেন, সেখানে মোবাইল টাওয়ার কাজ করছিল না। তাই কোনও পর্যটকই বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারেননি। শেষে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু গত দু’দিন ধরে কোনও খাবার, এমনকি পানীয় জল পর্যন্ত ঠিক মতো জোটেনি ওই পর্যটকদের। শেষে নিজেরাই চেষ্টা করে একটি গাড়ি জোগাড় করে বিপদ মাথায় নিয়ে বুধবার দুপুরে কাঠগোদামে পৌঁছন ওই ১৪ জন ভ্রমণার্থী। সেখান থেকে তাঁরা ঘরে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement