তদন্তে উঠে এসেছে, শান্তিপুরের ওই বধূ একা নন, ভুয়ো ভাতাপ্রাপকের সংখ্যা অন্তত ৮২! —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সরকারি প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর বদলে ‘বিধবা ভাতা’র তালিকায় নাম উঠেছিল শান্তিপুরের এক বধূর। সেই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই তদন্ত শুরু করে প্রশাসন। সেই তদন্তেই উঠে এসেছে, শান্তিপুরের ওই বধূ একা নন, ভুয়ো ভাতাপ্রাপকের সংখ্যা অন্তত ৮২! বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্নীতি ঘটেছিল অতিমারির সময়ে। অভিযুক্ত ভাতাপ্রাপকদের কাছ থেকে আসল নথি চেয়ে পাঠানো গয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে কড়া শাস্তির কথাও বলছে প্রশাসন।
সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, শান্তিপুরে শেফালি দে নামে এক মহিলা বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। যদিও তাঁর স্বামী পরেশ দে বেঁচে রয়েছেন। অভিযোগ আরও রয়েছে। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা ৩ হাজার টাকা নিয়ে ওই কাজ করেছেন। এই খবর প্রথম প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার অনলাইনে। তার পরেই অনিয়মের তদন্তে নামে প্রশাসন। তদন্তে যা উঠে এসেছে, তাতে বিস্মিত শান্তিপুর ব্লক প্রশাসন। সূত্রের খবর, ভাতা-দুর্নীতির একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে আপাতত ৮২ জন ভুয়ো ভাতাপ্রাপকের সন্ধান মিলেছে । প্রত্যেকের কাছ থেকে আসল নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যেক দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কড়ো শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক।
প্রশাসন সূত্রের খবর, শান্তিপুর ব্লকে সব সরকারি প্রকল্পে মোট ৩২ হাজার ভাতাপ্রাপক রয়েছেন। নতুন করে সেই সমস্ত সুবিধাপ্রাপকদের ‘প্রোফাইল’ ঘেঁটে দেখার কাজ করতে গিয়ে মিলেছে অনিয়মের হদিস। ৮২ জন ‘ভুয়ো’ ভাতাপ্রাপকের হদিসও মিলেছে। অভিযোগ, বিধবা না-হয়েও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী না-হয়েও সমাজ কল্যাণ দফতরের মানবিক ভাতা পেয়েছেন তাঁরা। আবার ৬০ বছর হওয়ার আগেই কারও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে বার্ধক্য ভাতা। আর কমবেশি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভুয়ো শংসাপত্র জোগাড় করে ভাতার টাকা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রে খবর, ভাতা পাওয়ার জন্য কেউ কেউ জাল আধার কার্ড নম্বর ব্যবহার করেছেন। আর এই অনিয়ম অতিমারির সময় হয়েছে বলেই অভিযোগ। সরকারের তরফে তখন ‘থার্ড পার্টি’র সাহায্যে প্রকল্পগুলির ডেটা এন্ট্রির কাজ করানো হয়েছিল। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, সে কারণেই অতিমারির সময় এই দুর্নীতি হয়েছে। শান্তিপুর ব্লকে প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপকের সংখ্যা সাত হাজার। এই নিয়েও সন্দেহ রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
শান্তিপুর বিডিও সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এ রকম একাধিক গন্ডগোল খুঁজে পেয়েছি, যেখানে যোগ্য না-হওয়া সত্ত্বেও ভাতা পাচ্ছেন কেউ কেউ। এ ক্ষেত্রে প্রায় সব ক’টি আবেদন জমা পড়েছিল অতিমারির সময়। আমরা ৩২ হাজার ভাতার মধ্যেই এই গন্ডগোল খোঁজার চেষ্টা করছি।’’ এ বিষয়ে রানাঘাটের মহকুমাশাসক ভরত সিংহ বলেন, ‘‘এমন ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তা হলে বিষয়টা অবশ্যই চিন্তার। আমি নজর রাখব। প্রত্যেকটি ভুয়ো ভাতাপ্রাপককে চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’