(বাঁ দিকে) শেখ হাসিনা, টিউলিপ সিদ্দিক (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
জনবিক্ষোভের জেরে ছ’মাস আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন পিসি শেখ হাসিনা। এক আবাসন ব্যবসায়ীর থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট নেওয়া নিয়ে বিতর্কের জেরে মঙ্গলবার ব্রিটেনের মন্ত্রিপদ ছাড়লেন বোনঝি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। ব্রিটেনে সিটি মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজ়ারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার) পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সের নির্বাচনে চার বার জয়ী লেবার পার্টির নেত্রী টিউলিপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নীতি-বহির্ভূত সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। সেখানে দাবি করা হয়, প্রবাসী বাংলাদেশি আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালিফের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন হাসিনার ভাইঝি।
ব্রিটেনের জমি ও আবাসন দফতরের ‘মালিকানা হস্তান্তর নথি’ প্রকাশ করে ওই খবরে দাবি করা হয়েছিল, মোতালিফের কাছ থেকে লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার ওই ফ্ল্যাটের মালিকানা গ্রহণের বিনিময়ে কোনও অর্থ দিতে হয়নি টিউলিপকে। ওই নথি জানাচ্ছে, ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। তখন অবশ্য টিউলিপ মন্ত্রী বা পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন না। এর আগে ২০০১ সালে সেটি ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (প্রায় ২ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা) দিয়ে কেনা হয়েছিল। ফ্ল্যাটটির বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে একই ভবনের আর একটি ফ্ল্যাট গত অগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৭ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা) বিক্রি হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ৭০ বছরের মোতালিফ ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ’ হিসাবেই পরিচিত। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা। ভোটার তালিকা সংক্রান্ত নথি জানাচ্ছে, ওই ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আর এক ব্যক্তিও বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। মোতালিফের ঘনিষ্ঠদের ব্যাখ্যা, ব্যবসায় মন্দার সময় তাঁকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা তথা হাসিনার বোন রেহানা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পদ’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন মোতালিফ।
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান়ডে টাইমস্’ গত সপ্তাহে জানিয়েছে, লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে ফিঞ্চলে রোডের ধারে হাসিনার আর এক বোনঝি আজমিনা সিদ্দিকের একটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সেটি আজমিনাকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল। টিউলিপের স্বামী ক্রিশ্চিয়ান পার্সিও এক সময়ে এই ফ্ল্যাটটিকে নিজের ঠিকানা হিসাবে ব্যবহার করেছেন বলে ওই খবরে জানানো হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত ৫ অগস্ট জনবিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ ইস্তফা দিয়ে হাসিনা দেশ ছাড়ার সময় তাঁর সঙ্গী ছিলেন টিউলিপ-আজমিনার মা রেহানা। দুই বোন এক সঙ্গেই ভারতে এসেছিলেন। পরে রেহানা ব্রিটেনে ফিরে যান।