কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার হলেন মনোজ বর্মা। —ফাইল ছবি।
কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার করা হল মনোজ বর্মাকে। তিনি ১৯৯৮ ব্যাচের আইপিএস অফিসার। মনোজ রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) পদে নিযুক্ত ছিলেন। এর আগে তিনি কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের দায়িত্ব সামলেছেন। কলকাতা পুলিশে তিনি ডিসি ডিডি (স্পেশাল), ডিসি (ট্র্যাফিক) পদেও ছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে নবান্ন জানিয়েছে, মনোজকেই কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার করা হল। আলোচনায় অন্য কয়েক জন আইপিএস অফিসারের নাম থাকলেও শেষ অবধি মনোজেই সিলমোহর দিয়েছে নবান্ন। একই সঙ্গে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের একাধিক পদে বদল আনা হয়েছে। কলকাতার সদ্যপ্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে পাঠানো হয়েছে এডিজি (এসটিএফ) পদে।
১৯৬৮ সালে মনোজের জন্ম। সেপ্টেম্বরই তাঁর জন্মমাস। ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন। রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুরে মনোজের জন্ম। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করা মনোজ ২০১৯ পর্যন্ত দার্জিলিঙের আইজি পদে ছিলেন। তার পরে তাঁকে নিয়ে আসা হয় ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দায়িত্বে। ভাটপাড়া এবং কাঁকিনাড়ায় গোলমালের সময় তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের সিপি করা হয় সেই সময়। একটা সময়ে তিনি উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ব্যারাকপুর) ছিলেন। তখনও পুলিশ জেলা ভাগ হয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট হয়নি।
মনোজ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন রাজ্য রাজনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। তখনও রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার। সেই সময়ে জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদীদের কার্যকলাপ তুঙ্গে। মনোজ সেই কার্যকলাপ রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন। ‘কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স’-এর দায়িত্বেও ছিলেন মনোজ। এর পর ডিআইজি পদমর্যাদায় উন্নীত হয়ে মনোজ চলে যান শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে। তার পর দার্জিলিঙের আইজি। সেটা ২০১৭ সাল। পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সেই সময়ের আন্দোলনও মনোজ সামলেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে।
২০১৯ সালে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রতি দিনই কোথাও না কোথাও খুন, মারামারি, গন্ডগোল লেগেই থাকত। সেই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার মনোজকে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের প্রধান করে পাঠায়। ব্যারাকপুরের সিপি হিসাবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মনোজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ব্যারাকপুরে থাকাকালীন একধিক বার তাঁকে জরুরি পরিস্থিতিতে ‘অ্যাকশনে’ নামতে দেখা যায়। এক বার ভাটপাড়ায় গোলমালের সময়ে হেলমেট না পরেই গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন। হাত দিয়েই ইট-পাটকেল আটকানোর চেষ্টা করেন মনোজ। সেই সময় বাহিনী এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা না করে খালি হাতে অ্যাকশনে নামার জন্য তাঁর ভূমিকা কিছুটা সমালোচিতও হয়। তবে মনোজ সে সবকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি কখনও। মনোজ দুর্নীতি দমন শাখার এডিজি-ও ছিলেন।
২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের পুলিশ পদক পেয়েছিলেন মনোজ। পরে ২০১৯ সালে পেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ পদক। ওই বছর স্বাধীনতা দিবসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা তাঁকে ওই পদক দেন। ভাটপাড়ায় শান্তি ও স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই মনোজকে ওই পদক দেওয়া হয়েছিল।