কলকাতার পুজোয় নিত্যনতুন আলোকসজ্জা উপহার দিয়ে থাকেন চন্দননগরের আলোক ব্যবসায়ীরা। ফাইল চিত্র।
প্রতি বছর আশ্বিন মাসে দেবী দুর্গার আগমন কেন্দ্র করে সেজে ওঠে শহর কলকাতা। উৎসবের দিনগুলিতে রাতের মহানগরীকে সাজিয়ে তোলেন যাঁরা, এ বার পুজোর আগে মন খারাপ তাঁদের। কারণ পুজোর আর দিন চল্লিশ বাকি থাকলেও, এখনও সে ভাবে বায়না হয়নি চন্দননগরের আলোপাড়ায়। চন্দননগরের আলোক শিল্পের জগৎজোড়া নাম। কলকাতা শারদোৎসবে প্রতি বছর নিত্যনতুন আলোকসজ্জার চমক দেন চন্দননগরের শিল্পীরা। কিন্তু এ বারের পুজোর আলোকসজ্জায় থাকবে না কোনও নতুনত্বের ছোঁয়া। আগে যেখানে এক একটি আলোক ব্যবসায়ীর কাছে কম করে পাঁচ সাতটি পুজোর কাজ থাকত, এ বার অধিকাংশ ব্যবসায়ীকেই কলকাতার কোনও পুজো কমিটি বায়না করে অগ্রিম দেয়নি। ফলে গত বছর করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউ সামাল দিয়ে যে টুকু লাভের মুখ দেখে ছিলেন চন্দননগরের আলোক ব্যবসায়ীরা, এ বার তত টুকু সম্ভাবনাও দেখছেন না তাঁরা।
চন্দননগর লাইট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগী সম্পাদক জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘পুজো নিয়ে আমরা যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছি। লকডাউন উঠে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে যে সব বিধিনিষেধ এখনও রয়েছে, তাতে কলকাতার দুর্গাপুজোর উদ্যোক্তারা কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারছেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এর আগে প্রতি বছর যে পরিমাণ ব্যবসা আমাদের কাছে আসত, এ বার তার ২০ শতাংশ কাজের প্রস্তাব আমাদের কাছে এসেছে। বাকি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুজো উদ্যোক্তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।’’ চন্দননগরের আলোকপাড়ার পরিসংখ্যানে, কলকাতার বড় বারোয়ারি পুজোগুলি ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকার আলোকসজ্জা অর্ডার দিত। আর ছোট বারোয়ারি পুজোর ক্ষেত্রে এক থেকে দেড় লাখের মধ্যে। কিন্তু এ বার আর তেমন সম্ভাবনা দেখছেন না আলোক ব্যবসায়ীরা। কারণ হাতে আর বিশেষ সময় নেই, তাই এ বারের পুজোয় আলোর ব্যবসায় ভাটার টান।
উল্লেখ্য, চন্দননগরে রেজিস্টার্ড ৮২৫ জন আলোক ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ভাবে ৪০ হাজার মানুষ যুক্ত। একটি সূত্র জানাচ্ছে, করোনা সংক্রমণের জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে কলকাতার পুজোর বাজেট কমেছে ৭০-৮০ শতাংশ। গত বছর বহু বারোয়ারি ৫০ শতাংশ বাজেটে পুজো করলেও, মোটামুটি ব্যবসা করেছিল চন্দননগরের আলোকপাড়া। গত বছর হাজার সমস্যার মধ্যেও ৫০-৫৫ শতাংশ অর্থ নিয়েই কলকাতার পুজোর আসর সাজিয়েছিলেন চন্দননগরের আলোক ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। কারণ গত বছর যে সমস্ত পুজোর বাজেট অর্ধেক হয়েছিল, সেগুলির বাজেট এ বছর আরও কমে গিয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা চালিয়েও চন্দননগরের আলোকপাড়াকে চূড়ান্ত বায়না করতে পারেনি কলকাতার ৬০-৭০ শতাংশ পুজো কমিটি।
কলকাতার পুজোয় নিত্যনতুন আলোকসজ্জা উপহার দিয়ে থাকেন চন্দননগরের আলোক ব্যবসায়ীরা। এমন জটিল পরিস্থিতিতে আলোকসজ্জায় নতুনত্ব থাকবে না বলেই জানিয়েছেন চন্দননগর লাইট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাবু পাল। তাঁর কথায়, ‘‘চন্দননগরের আলোক ব্যবসায়ীদের কাছে এ বার কাজ না আসায় বেশিরভাগ গোডাউন বন্ধ। যত বেশি কাজ হবে, তত বেশি নতুনত্ব আসবে আমাদের শিল্পে। এ বার নতুনত্ব আনার থেকে ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরে চন্দননগরের আলোক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।’’