উৎসবের আনন্দ যেন মাটি না হয় মুখের দুর্গন্ধের কারণে। প্রিয়জনদের সঙ্গে দিনভর কাটুক হুল্লোড়ে। আপনার আত্মবিশ্বাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে পারে এই রোগ। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে হ্যালিটোসিস।
কেবল ঠিক করে দাঁত না মাজার কারণে নয়, বিভিন্ন রোগ বা অভ্যাসের কারণেও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন অনেকে। নিজেকে টিপটপ রাখতে ঘরোয়া কিছু টোটকা কাজে আসতে পারে এ ক্ষেত্রে।
ঠিক করে ব্রাশ না করলে বা ফ্লস না করলে, ব্যাকটেরিয়া ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। দাঁতে প্লাক নামে পরিচিত ব্যাকটেরিয়ার একটি পাতলা আস্তরণ তৈরি হয়। প্লাক পরিষ্কার করা না হলে এটি মুখে দুর্গন্ধ তৈরি করে। এতে দাঁতের ক্ষয়ও হতে পারে।
দুর্গন্ধের অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে অন্যতম শরীরে কিছু সংক্রমণ। ডায়াবেটিসের সমস্যা, কিডনি এবং মূত্রাশয় সম্পর্কিত সমস্যার জেরেও মুখে বাজে গন্ধ তৈরি হতে পারে। তা দূর করার সহজ নিয়মগুলি জেনে নিন ভাইফোঁটায় অতিথি সমাগমের আগেই।
১। দিনে দু’বার দাঁত ব্রাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ব্রাশ করার পরে প্রতি ৪-১২ ঘণ্টা পরেই প্লাক তৈরি হতে শুরু করে। যদি নিয়মিত ব্রাশ না করা হয়, তা হলে প্লাকের এই স্তরটি শক্ত হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত চাপ নিশ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে। ব্রাশ করার পাশাপাশি, খাবারের কণা ধুয়ে ফেলার জন্য ফ্লস করতে ভুলবেন না।
২। ব্যাকটেরিয়া দূর করতে কেবল দাঁত নয়, জিহ্বা পরিষ্কারের প্রয়োজনীতাও অনেকখানি। ব্রাশের পিছন বা স্ক্র্যাপার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে ব্রাশ করার পরেই।
৩। প্রতি বার খাবার খাওয়ার পরে যে কোনও মাউথওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে ২-৩ বার। বেকিং সোডা দিয়ে ঘরেও তৈরি করে নিতে পারেন মাউথওয়াশ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বেকিং সোডা (সোডিয়াম বাইকার্বোনেট) মুখের ব্যাকটেরিয়া মেরে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে পারে। ১ কাপ গরম জলে ২ চা-চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। থুতু ফেলার আগে কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ডের জন্য মাউথওয়াশ নিয়ে কুলকুচি করুন।
৪। প্রতি বার খাওয়ার পরে এক চামচ মৌরি চিবোনোর অভ্যাস করুন। এই টোটকা হজমের জন্য উপকারী এবং মুখের গন্ধও দূর করে। শুধু শুধু মৌরি খেতে ইচ্ছে না করলে, চিনি দিয়ে মৌরি চিবোতে পারেন। অথবা একটু ভেজে নিয়েও খেতে পারেন।
৫। যাঁদের মুখ শুকনো থাকে, তাঁদেরও নিশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়। মুখকে আর্দ্র এবং পরিষ্কার রাখতে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। যদি তাতেও কাজ না হয়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত।
৬। কিছু খাবার, যেমন রসুন, পেঁয়াজ, মুলো এবং মশলাদার খাবার থেকে দূরে থাকলে ভাল। কারণ এগুলিও নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ তৈরি করে। কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া কমিয়ে দিন। বিশেষ করে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাওয়ার আগে বা মানুষের সঙ্গে মেলামেশার আগে।
৭। ধূমপান যে শ্বাসকষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ, তা কে না জানে! সিগারেটের তামাক আপনার মুখের মধ্যে খারাপ গন্ধ তৈরি করতে পারে। তা ছাড়াও দাঁতে কালো দাগ তৈরি করে দেয়। ধূমপান আপনার মুখের গহ্বরকেও শুষ্ক করে দেয়। এ সবের ফলে নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। এই সমস্যা এড়াতে সম্পূর্ণ রূপে ধূমপান ত্যাগ করুন। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।