Russia Ukraine War

Russia Ukraine Conflict: ভাই যাচ্ছেন যুদ্ধক্ষেত্রে, কলকাতায় লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়ে প্রার্থনায় ইউক্রেনের মেয়ে ইরিনা

ইউক্রেনে যুদ্ধ লাগার আগে থেকেই দমদমের দে দম্পতি দারুণ উদ্বেগে। মামাবাড়ির জন্য মন খারাপ আট বছরের মেয়ে আদৃজারও।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:৪৪
ইউক্রেনে যুদ্ধ, উদ্বেগ কলকাতায়।

ইউক্রেনে যুদ্ধ, উদ্বেগ কলকাতায়।

সকাল থেকে ফোন করলে বেজেই যাচ্ছিল। টানা শোনা যাচ্ছিল গানটা— ‘আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে...।’ দমদমের বাসিন্দা ইউক্রেনের মেয়ে ইরিনা ফোনে এই গানটা যখন কলারটিউন হিসেবে সেট করেছিলেন, তখন রাশিয়া তাঁর বাপের বাড়ির দেশ ইউক্রেনে হামলা চালায়নি। কিন্তু এখন যেন ওই গানটাই বাস্তব হয়ে উঠেছে। বিবাহ সূত্রে ইউক্রেন ছেড়ে ভারতে এবং কলকাতায় আসা ইরিনাদের আকাশ এখন সত্যিই থমকে গিয়েছে।

বাড়ির জন্য মন খারাপ, বাড়ির লোকেদের জন্য উদ্বেগ, জন্মভূমি দেশের জন্য কষ্ট সব কিছু মিলিয়ে গত দু’দিনে যেন মনের ভিতরটা ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। বারবার ফোন করছেন সুদূর ইউক্রেনে। বেশিরভাগ সময়েই কথা বলা যাচ্ছে না। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া ইউক্রেনে টেলিফোনে যোগাযোগ হওয়াটা যে এখন গোটাটাই ভাগ্য-নির্ভর।

Advertisement

বয়স্ক বাবা, মা ছাড়াও আছেন শয্যাশায়ী ঠাকুমা। আর আছেন এক ভাই। বয়সে ছোট সেই ভাই বছর তিনেক সামরিক বাহিনীতে কাটিয়ে সদ্যই বাড়ি ফিরেছেন। এখন আবার সরকারি নির্দেশে যুদ্ধ যেতে হবে। ভাই সার্গেই বরাবর ওঁকে ইরা বলে ডাকে। সে ফের যুদ্ধে যাবে। বড্ড মনে পড়ছে ভাইয়ের কথা। কিন্তু উপায় কি! কলকাতা থেকে প্রায় পৌনে ছ’হাজার কিলোমিটার দূরে কী হচ্ছে সেটুকু সংবাদমাধ্যমে দেখেই শিউরে উঠছেন ইরিনা। বললেন, ‘‘এত দূরে বলে তো আর ঘনঘন যাওয়া হয় না। দু’তিন বছর পরে পরে যাই। এখন মনে হচ্ছে এক ছুট্টে চলে যাই। কিন্তু উপায় নেই। প্রভু যিশুর কাছে দিনরাত প্রার্থনা করছি। খ্রিস্টান হলেও আমি বাঙালি ঘরের হিন্দু রীতি রেওয়াজ সব মানি। শাশুড়ি মা লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া শিখিয়েছেন। বারবার পাঁচালি নিয়ে বসে পড়ছি ঠাকুরের আসনের সামনে। যিশু বা মা লক্ষ্মী যেই হোন তিনি যেন আমার পরিবার, আমার দেশকে রক্ষা করেন।’’ সঙ্গে ফেসবুকে লিখে রেখেছেন, ‘প্রে ফর ইউক্রেন’।

সমান উদ্বেগে ইরিনার স্বামী ও কন্যা।

সমান উদ্বেগে ইরিনার স্বামী ও কন্যা।

শ্বশুরবাড়ির দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সমান উদ্বেগে ইরিনার চিকিৎসক স্বামী সৌরভ দে। হাওড়ার আন্দুল থেকে ইউক্রেনের টের্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পড়তে গিয়েছিলেন সৌরভ। ২০০৪ সালে তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময়েই পরিচয় হয় টের্নোপিল শহরের বাসিন্দা ইরিনা প্রিতলিউকের সঙ্গে। এর পরে প্রেম ও পরিণয়। ২০০৯ সালে বিয়ের পরে ইরিনা পাকাপাকি চলে আসেন হাওড়ায়। পরে দমদমের বাসিন্দা হন।

স্ত্রী ইরিনার সঙ্গে সঙ্গে সৌরভ যুদ্ধ লাগার পর থেকে ফোন করার চেষ্টা করে গিয়েছেন শ্বশুরবাড়িতে। তিনি বললেন, ‘‘গতকাল সারাদিন ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে একবার পেয়েছিলাম। ওখানে বিদ্যুৎ নেই, ফোন, ইন্টারনেট সব পরিষেবাই বিঘ্নিত। যে যেখানে পারছে আশ্রয় নিচ্ছে। আমার শ্বশুরবাড়ির সকলেই এখন নিজেদের বাড়িতেই রয়েছেন। তবে খাবার দাবারের খুবই অভাব। কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। এটিএম-এ টাকা পয়সা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কেউ কোথাও যেতে পারবেন না। ফলে ওঁদের যে নিজেদের কাছে নিয়ে আসব সে উপায়ও নেই।’’

ইউক্রেনে শ্বশুরবাড়ির সবাই খুব আতঙ্কে। আর এখানে দে দম্পতি দারুণ উদ্বেগে। মামাবাড়ির জন্য মন খারাপ ইরিনার আট বছরের মেয়ে অদ্রিজারও। সৌরভ বললেন, ‘‘জন্ম থেকে মাত্র তিনবারই মামাবাড়ি গিয়েছে মেয়ে। কিন্তু দাদু-দিদা অন্ত প্রাণ। সারাদিন টিভির সামনে বসে আছে। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করছে। সারাদিন একই প্রশ্ন— সব ঠিক হয়ে যাবে তো!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement