R G kar Incident

আরজি কর-কাণ্ডে ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’, সিবিআই চার্জশিট পড়ল আনন্দবাজার অনলাইন

মঙ্গলবার আরজি কর-কাণ্ডে শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। সেই চার্জশিটে সিবিআই জানিয়েছে, ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’ পেয়েছে তারা।

Advertisement
সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:০৫
RG Kar Rape & Murder: CBI Chargesheet claims 11 evidences against the accused dgtls

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

মঙ্গলবার আরজি কর-কাণ্ডে শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। ৪৫ পাতার সেই চার্জশিটে সিবিআই জানিয়েছে, ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’ পেয়েছে তারা। সিবিআইয়ের সেই চার্জশিট এখন আনন্দবাজার অনলাইনের হেফাজতে।

Advertisement

সিবিআই চার্জশিটে লেখা হয়েছে, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই যে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত, তার বহু প্রমাণ হাতে রয়েছে। সংগৃহীত বয়ান, ভিডিয়ো এবং ফরেন্সিক বা সায়েন্টিফিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। সিবিআই চার্জশিটে যে ১১টি প্রমাণ দিয়েছে, তা হল—

১. সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই জানা গিয়েছে, গত ৯ অগস্ট ভোরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় গিয়েছিলেন ধৃত। সেটাই ছিল মূল ঘটনাস্থল।

২. অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার যে ওই রাতে আরজি কর হাসপাতালেই ছিলেন, তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশন থেকেই তার প্রমাণ মিলেছে।

৩. ময়নাতদন্তের সময় মৃতার দেহ থেকে ধৃতের ডিএনএ মিলেছে।

৪. ধৃতের যে প্যান্ট এবং জুতো পুলিশ উদ্ধার করেছিল, তা থেকে মৃতার রক্তের দাগ মিলেছে।

৫. ঘটনাস্থল থেকে যে ছোট ছোট চুল পাওয়া গিয়েছিল, তা অভিযুক্তের চুলের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

৬. ঘটনাস্থল থেকে যে ব্লুটুথ ইয়ারফোন উদ্ধার হয়েছিল, তা ধৃতের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ফোনের সঙ্গেই যুক্ত ছিল। এখানে উল্লেখ করা জরুরি, ঘটনার রাতে ধৃতকে যখন ঘটনাস্থলের দিকে যেতে দেখা গিয়েছিল, তখন তাঁর গলায় ব্লুটুথ ইয়ারফোন জড়ানো ছিল। কিন্তু তিনি যখন ফিরছিলেন ঘটনাস্থল থেকে, তখন সেই ব্লুটুথ ইয়ারফোন তাঁর গলায় ছিল না।

৭. ধৃতের শরীর থেকে যে ক্ষতচিহ্ন মিলেছিল, দেখা গিয়েছে, ধৃতের মেডিক্যাল পরীক্ষার ২৪ থেকে ৪৮ ‌ঘণ্টা আগে সেই ক্ষত তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ, হিসাব মতো ৮ অগস্ট থেকে ৯ অগস্টের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল সেই ক্ষত। ঘটনাচক্রে, মহিলা চিকিৎসকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাও ওই সময়েই ঘটেছিল।

৮. অভিযুক্তের শরীরে যে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে, সেগুলি নির্যাতিতার প্রতিরোধের ফলেই তৈরি হয়েছিল।

৯. অভিযুক্তের মেডিক্যাল পরীক্ষা থেকে এ রকম কোনও প্রমাণ মেলেনি যে, তিনি সঙ্গমে অক্ষম।

১০. সিএফএসএল কলকাতার রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতার অন্তর্বাসের সেলাই যে ভাবে ছিঁড়ে গিয়েছে, তা থেকে বোঝা গিয়েছে যে, সেটি জোরজবরদস্তি খোলা হয়েছে।

১১. সিএফএসএল কলকাতার রিপোর্ট অনুযায়ী, মৃতা যে কুর্তি পরেছিলেন, কোমরের কাছে সেই কুর্তির দু’পাশটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তা টানাহেঁচড়ার কারণেই হয়েছে।

সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে যে বীর্য এবং লালারস মিলেছিল, তা ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারেরই।

গত ৯ অগস্ট সকালে আরজি করের চারতলায় সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে সেই রাতেই কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটেলিয়নের ব্যারাক থেকে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার গ্রেফতার হয়েছিলেন। কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পরে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই। তদন্ত যত এগিয়েছে, একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। প্রকাশ্যে এসেছিল আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলার সিসিটিভি ফুটেজ (আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য সেই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি)। সেই ফুটেজেই দেখা গিয়েছিল ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে।

পরনে টিশার্ট এবং জিন্‌স, হাতে হেলমেট, গলায় হেডফোন ঝুলিয়ে আরজি কর হাসপাতালের করিডরে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে। ফুটেজে উল্লেখ করা তারিখ এবং সময় বলছে, তখন ৯ অগস্ট ভোর ৪টে ৩ মিনিট। সিবিআই-ও চার্জশিটে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রাপ্ত প্রমাণের কথাই বলেছে।

আরজি কর-কাণ্ডে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। চার্জশিটে তারা জানিয়েছে, গোটা ঘটনায় বৃহত্তর ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, আর কেউ জড়িত কি না, সেই দিকগুলি খতিয়ে দেখতেই সন্দীপ এং অভিজিতের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সেই তদন্ত শেষ হলেই অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement