কলকাতা মেট্রোয় দুর্ভোগ বাড়ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের একাংশের। ফাইল চিত্র।
কলকাতা মেট্রো পরিষেবা নিয়ে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রিমহলে। তাঁদের অভিযোগ, সময় মেনে চলছে না মেট্রো! অফিস টাইমে ট্রেন দেরিতে আসছে। কোনও কোনও সময় না জানিয়ে ‘বাতিল’ও করে দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, এ জন্য স্টেশনে কোনও ঘোষণাও করা হচ্ছে না। শুধু ‘ডিসপ্লে বোর্ডে’ সময় বদলে যাচ্ছে। মেট্রো দেরিতে আসায় এবং বাতিল হওয়ার জেরে গন্তব্যে পৌঁছতে যেমন দেরি হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে এক একটা মেট্রোয় অতিরিক্ত ভিড় হচ্ছে। বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। মেট্রো কর্তৃপক্ষ যদিও বলছেন, সমস্যা সাময়িক। কোনও মেট্রোই বাতিল করা হয়নি। যেটুকু সমস্যা আছে, তা খুব শীঘ্রই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
গত কয়েক দিন ধরেই মেট্রোয় দুর্ভোগ হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার বেশ কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। ওই যাত্রীরা সকলেই অভিযোগ করেছেন যে, দেরিতে চলছে মেট্রো। এমনকি, ‘ডিসপ্লে বোর্ডে’ মেট্রো আসার যে সময় দেওয়া হয়, সেই সময় পেরিয়ে গেলেও মেট্রোর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আপনা থেকেই মেট্রোর সময় বদলে যাচ্ছে ‘ডিসপ্লে বোর্ডে’। কোনও ঘোষণাও করা হচ্ছে না। মঙ্গলবার আরও বেশ কয়েক জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁরাও মেট্রো পরিষেবা নিয়ে একই অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৮টা ২২ মিনিটে কবি সুভাষ স্টেশনে পৌঁছেছিলেন সুতপা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গন্তব্য ছিল এসপ্ল্যানেড। সুতপার অভিযোগ, ‘‘ডিসপ্লে বোর্ডে দক্ষিণেশ্বরগামী মেট্রোর সময় ছিল ৮টা ২৪। কিন্তু সময় মতো মেট্রো আসেনি। ২-৩ মিনিট দেরিতে এসেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সকালে অফিস যাওয়ার জন্য এমনিই তাড়াহুড়ো থাকে। তার মধ্যে ২-৩ মিনিট মেট্রো লেট। দেরি হওয়ার কারণে অস্বাভাবিক ভিড় হচ্ছে মেট্রোতে। অফিস থেকে ফেরার সময়েও একই সমস্যা। রোজ যদি এমন হয় তা হলে তো মুশকিল।’’
সুতপার মতোই মঙ্গলবার সাতসকালে মেট্রোয় চড়তে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন ঋতুরাজ চক্রবর্তী। তাঁর গন্তব্য ছিল চাঁদনি চক। অভিযোগ, কবি নজরুল স্টেশনে ‘ডিসপ্লে বোর্ডে’ দমদমগামী মেট্রোর সময় দেখানো হয়েছিল সকাল ৭টা ৪১। কিন্তু, সেই সময় মেট্রো আসেনি। সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটে মেট্রো আসে।
অনামিকা বসুরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাঁর গন্তব্য ছিল গিরিশ পার্ক। মঙ্গলবার দুপুরে কালীঘাট স্টেশনে ১২টা ৫৫ মিনিটের মেট্রোয় ওঠার কথা ছিল তাঁর। অভিযোগ, ২-৩ মিনিট দেরিতে ঢুকেছে মেট্রো। বিশ্বজিৎ দাস নামে এক যাত্রীর কথায়, ‘‘সকালে অফিসে টাইমে রোজই মেট্রো দেরিতে আসছে। এর ফলে বাড়তি ভিড় হচ্ছে। রোজই একই সমস্যা।’’
সোমবার রাত পৌনে ১০টায় দমদম যাওয়ার জন্য চাঁদনি চক স্টেশনে গিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়েন আকাশ সেনগুপ্ত। সোদপুরের বাসিন্দা আকাশের কথায়, ‘‘রাত ৯টা ৪১ মিনিটে মেট্রো ছিল। কিন্তু সেই মেট্রো আসেনি। দেখলাম, ডিসপ্লে বোর্ডে আপনা থেকেই মেট্রোর সময় বদলে ৯টা ৫৩ দেখায়। সেই সময় মেট্রো পাই। রাত ৯টা ৪১ মিনিটের মেট্রো বাতিল হয়। কিন্তু কোনও ঘোষণা করা হয়নি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘রোজই এই জিনিস চলছে। এর ফলে আমাদেরই ভোগান্তি হচ্ছে।’’
সোমবার দুপুরে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনে গিয়ে একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন অমিত পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘স্টেশনে ডিসপ্লে বোর্ডে কবি সুভাষগামী মেট্রোর সময় দেখাচ্ছিল দুপুর ১টা ২৯ মিনিট। কিন্তু সেই সময় কোনও মেট্রো আসেনি। এর পর বোর্ডে সময় দেখায় দুপুর ১টা ৪১ মিনিট। ওই সময়েও মেট্রো আসেনি। পরে দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে মেট্রো পাই।’’
গত শনিবার চয়নিকা সেন নামে এক যাত্রীও এই দুর্ভোগের মুখে পড়েন বলে দাবি করেছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দমদম মেট্রোয় পৌঁছন তিনি। তাঁর গন্তব্য ছিল ময়দান। চয়নিকার অভিযোগ, ‘‘সময়মতো মেট্রো পাইনি। ফলে অতিরিক্ত ভিড় হয়েছিল। রোজই এমনটা হচ্ছে।’’
অফিস টাইমে ৬ মিনিট অন্তর মেট্রো চলে। দিনের কোনও সময়ে দু’টি মেট্রোর সর্বোচ্চ ব্যবধান দাঁড়ায় ১৫ মিনিট। ইদানীং, এই সময় মেনে মেট্রো না চলায় দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীদের একাংশ।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘আমরা কোনও মেট্রোই বাতিল করিনি। বাতিল করা হলে বা কম সংখ্যক মেট্রো চালানো হলে আগে থেকে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়। সময়সূচি মেনেই মেট্রো চলছে। দু’এক জায়গায় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হওয়ার কারণে কিছু কিছু স্টেশনে মেট্রো একটু দেরিতে পৌঁছচ্ছে। খুব শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে এই সমস্যার।’’