গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা লাগানো নিয়ে বিতর্কের আবহেই এই খাতে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করল শিক্ষা দফতর। নবান্ন সূত্রে খবর, বিষয়টি অর্থ দফতরের বিচারাধীন ছিল। অর্থ দফতর সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার ফলে এই অর্থ বরাদ্দে কোনও বাধা রইল না। জানা গিয়েছে মোট ৩৭ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪৮৪ টাকা সরাসরি পৌঁছে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। চলতি সপ্তাহেই এই সংক্রান্ত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থ দফতর সূত্রে খবর, মৌখিকভাবে তারা অর্থ মঞ্জুর করার বিষয়টিতে অনুমোদন দিয়েছে। তবে এখনও কিছু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। তবে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ কবে থেকে শুরু হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র মারা গিয়েছেন ২০ দিন হল। অথচ ক্যাম্পাসে নজরদারির জন্য এখনও পরিকল্পনামাফিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি যাদবপুরে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল উঠতেই মঙ্গলবার তাঁরা পাল্টা দায় ঠেলেন সরকারের দিকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ মঙ্গলবার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমরা তো আর সিসি ক্যামেরা লাগাতে পারি না। একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সেটি সরকারি সংস্থা। এ বার তারা কী করছে, কী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে সিসি ক্যামেরা লাগাতে প্রাথমিকভাবে প্রায় এই পরিমাণ টাকাই খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছিল দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা।
যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিরাপত্তার অভাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি জবাবও তলব করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিযোগ ওঠে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ইউজিসির যে নির্দেশ রয়েছে, তা যাদবপুরে মানা হয়নি। এ নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, তখন গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য ঘোষণা করেন, ক্যাম্পাসে ‘সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া’ শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ তার পরে সাত দিন কেটে গেলেও যাদবপুর মেন হস্টেলের মূল ফটক বা অন্যত্র কোথাও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। কেন এই দেরি? প্রশ্ন করতেই মঙ্গলবার হঠাৎ সুর বদলে ফেলেন তাঁর।
গত বুধবার উপাচার্য বলেছিলেন, যাদবপুরে কোথায় কোথায় সিসি ক্যামেরার নজরদারি চলবে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়েবেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাও হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা এখনও লাগানো গেল না কেন? ওয়েবেল কি এ ব্যাপারে দেরি বা টালবাহানা করছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ওয়েবেলের মতো নামী সংস্থা টালবাহানা করবে কি করবে না বা করছে কি করছে না, সেটা তো আমাদের দেখার কথা নয়। জরুরি পরিস্থিতিতে আমরা একটি কাজের দায়িত্ব দিয়েছি। আর একটি নামী সংস্থাকেই দায়িত্ব দিয়েছি। তার ওপর সেই সংস্থা সরকারের। আমরা বলেছিলাম যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে। এর পর আর আমরা কী করতে পারি?’’ বিতর্কের আবহে শিক্ষা দফতর প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করায় সিসি ক্যামেরা সংক্রান্ত জট কাটে কি না, তা-ই এখন দেখার।