Anupam Hazra and Anubrata Mondal

কেষ্টর ‘গ্রেফতারি বার্ষিকী’ পালন করলেন ‘ভাইপো’ অনুপম, গুড়-বাতাসা বিলি বিশ্বভারতীর সামনে

অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারির পর অনুপম হাজরা বলেছিলেন, ‘‘আজ বীরভূমের স্বাধীনতা দিবস।’’ বুধবার রাখিপূর্ণিমায় গুড়-বাতাসা বিলি করে অনুব্রতের গ্রেফতারির এক বছর ‘পালন’ করলেন বিজেপি নেতা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ১২:০০
Anupam Hazra and Anubrata Mondal

অনুব্রত মণ্ডল এবং অনুপম হাজরা (বাঁ দিক থেকে) —নিজস্ব চিত্র।

গত বছর রাখিপূর্ণিমার দিন গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন অনুব্রত মণ্ডল। এখনও তিহাড় জেলে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি। বুধবার অনুব্রতের গ্রেফতারির ‘বর্ষপূর্তি’ পালন করলেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। এক সময় যাঁকে ‘কাকা’ বলে সম্বোধন করতেন, তাঁকে নিয়ে অনুপমের মন্তব্য, ‘‘এক সময় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন উনি। তাই ওঁরই পছন্দের গুড়-বাতাসা এবং নকুলদানা খাইয়ে রাখির দিন সবার মধ্যে একতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করলাম আমরা।’’ অন্য দিকে, তৃণমূলের কটাক্ষ, ‘‘বীরভূমে বিজেপি বলে কিচ্ছু নেই। তাই প্রচার পেতে এসব করছেন অনুপমরা।’’

Advertisement

বুধবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাসনা গৃহের সামনে অনুব্রতের ‘গ্রেফতারি অ্যানিভার্সারি’ পালন করেন অনুপম। গত বছর অগস্ট মাসে রাখির দিনেই নিজের বাসভবন থেকে গ্রেফতার হন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত। বুধবার রাখির দিন অনুপমের সঙ্গে বিজেপি কর্মীসমর্থকেরা বিশ্বভারতীর সামনে জড়ো হন। তাঁরা একে অপরকে রাখি পরান। মিষ্টিমুখ করার জন্য ছিল গুড়-বাতাসা এবং নকুলদানা।

অনুপমের কথায়, ‘‘গত বছর রাখিপূর্ণিমার দিন অনুব্রত মণ্ডলকে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল। তৃণমূলের জেলা সভাপতির সময় আমাদের বিজেপি কর্মীদের উপর অত্যাচার হয়েছে। তাই গ্রেফতারের দিনকে স্মরণ করিয়ে আমাদের দলের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছি। এটা বিজেপি কর্মীদের কাছে মুক্তির দিন। তাছাড়া রাখিপূর্ণিমা একতার দিন। রাখি নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন ছিল মানুষের মধ্যে একতা বৃদ্ধি হবে এতে। তাই আজ সমস্ত নেতাকর্মীদের একজোট করে ‘ইউনাইটেড বোলপুর’-এর বার্তা দিতে চাইছি আমরা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘রাখি উৎসব পালনের পাশাপাশি অনুব্রত মণ্ডলের যে সব জিনিস প্রিয়—গুড়, বাতাসা, নকুলদানা, যার মাধ্যমে উনি মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইতেন, ভয় দেখাতেন, তাঁর অ্যারেস্ট অ্যানিভার্সারিতে এগুলো বিলি করছি।

তবে বিজেপি নেতাকর্মীদের এই রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন বিশ্বভারতীর উপাসনার গৃহের সামনে করা হল, তা নিয়ে আশ্রমিকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। অন্য দিকে, তৃণমূলের বীরভূম জেলার সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি দলের কিছু নেই। তাই এ সব করে প্রচারে আসার চেষ্টা করছে। আর আমরা বিশ্বাস করি, অনুব্রত মণ্ডল জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরে আসবেন শীঘ্রই। আবার তিনি মানুষের জন্যে কাজ করবেন।’’

উল্লেখ্য, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পরও প্রাক্তন সাংসদ অনুপমের সঙ্গে অনুব্রতের সম্পর্ক ভালই ছিল। ২০১৯ সালের ২৯ এপিল ভোটের সময় বিজেপির অনুপম তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়ে অনুব্রতের পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছিলেন। অনুব্রত দাবি করেন, সেখানে মাছ-ভাতও খেয়েছেন অনুপম। সেই ছবি ভাইরাল হওয়ার পর তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করেন অনুপম। তৎকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে পাশে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের অফিসে গিয়ে মাছ-ভাত খেয়েছি না কি তা ভোগের প্রসাদ ছিল সেটা ভাল করে খতিয়ে দেখা হোক।’’ অন্য দিকে, অনুব্রত বলেন, ‘‘কেউ কারও বাড়ি এলে তাঁকে খাবার দেওয়া আমাদের‌ কালচার। ওকে খেতে বলে কোনও অন্যায় করিনি। আমাদের এখানে রান্না হয়েছিল। ও পোস্ত খেতে ভালোবাসে। ভাত, আলু পোস্ত, বাটা মাছের ঝাল, মাছের টক হয়েছিল। ‌‌খেতে বলেছিলাম কারণ, ও কিছু না খেয়ে এখানে এসেছিল।’’

সে সব দিন এখন অতীত। এখন ‘কাকা’ কেষ্টর ‘গ্রেফতারি দিবস’ পালন করে অন্যদের মিষ্টিমুখ করালেন ‘ভাইপো’ অনুপম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement