Duttapukur Blast

বারুদ সরবরাহের নেপথ্যে কি ‘পণ্ডিতের হাত’? মোচপোলে বিস্ফোরণের পর শুরু জোর গুঞ্জন

গ্রাম সূত্রের খবর, বারুদ ও রাসায়নিক সরবরাহের বড় অংশ মোচপোল, বেরুনানপুকুরিয়ার মতো এলাকায় পৌঁছত পণ্ডিতের থেকে। ব্যবসার সূত্র ধরে তাঁর সঙ্গে জিরাট ও কেরামতের পরিচয় হয়।

Advertisement
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৪৯
দত্তপুকুরের মোচপোল বাজি বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে বাড়ি।

দত্তপুকুরের মোচপোল বাজি বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে বাড়ি। —ফাইল চিত্র।

পণ্ডিত!

Advertisement

দত্তপুকুরের মোচপোলে বিস্ফোরণে ন’জনের মৃত্যুর ঘটনার দু’দিন পরে এই নাম নিয়েই শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। গ্রামের খবর, ওই এলাকায় বারুদ সরবরাহের শৃঙ্খলের শীর্ষে রয়েছে ওই নাম। শুধু তা-ই নয়, এলাকার বোমা-বাজি সিন্ডিকেটের পিছনে মাথা তিনিই কি না, তা নিয়েও চর্চা তুঙ্গে। গ্রামবাসীদের অনেকে শুনেছেন, প্রকাশ্যে যার যে ভূমিকাই থাক না কেন, আদতে পণ্ডিতের দুই হাত ছিলেন কেরামত আলি ও মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা জিরাট শেখ। মোচপোলের বিস্ফোরণে ওই দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে।

গ্রাম সূত্রের খবর, বারুদ ও রাসায়নিক সরবরাহের বড় অংশ মোচপোল, বেরুনানপুকুরিয়ার মতো এলাকায় পৌঁছত পণ্ডিতের থেকে। ব্যবসার সূত্র ধরে তাঁর সঙ্গে জিরাট ও কেরামতের পরিচয় হয়। এক সময়ে পণ্ডিতের কাছে কেরামত ও জিরাট দু’জনেই আলাদা ভাবে বারুদ ও রাসায়নিক কিনতেন। সেখান থেকেই তাঁদের ঘনিষ্ঠতা হয়। তার পরে ধীরে ধীরে দু’জনে মোচপোল, কাঠুরিয়া, বেরুনানপুকুরিয়ার মতো জায়গাগুলিতে কাজকর্ম শুরু করেন বলেন দাবি গ্রামবাসীদের।

দত্তপুকুরের নারায়ণপুর, যেখানে সরকারি ভাবে বাজি তৈরির ছাড়পত্র রয়েছে, সেখানে কেরামতেরা ব্যবসার সুযোগ পাননি। তাই তাঁরা মোচপোলে সামসুল আলির (বিস্ফোরণে মৃত) জমিতে বাজির কারখানা ও গুদাম বসান। উত্তরাধিকার সূত্রে বিরাট জমিজমার মালিক সামসুলও সেই বাজি ব্যবসার অংশীদার হয়ে যান। রবিবারের বিস্ফোরণের পরে সেই সাম্রাজ্য আদৌ বাজির নাকি বোমার, তা নিয়ে চলছে চাপান-উতোর। সেখানে পণ্ডিতের পাঠানো বারুদ কত গুদামে রয়েছে, তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে গ্রামে।

কে এই পণ্ডিত? স্পষ্ট উত্তর নেই গ্রামের মানুষের কাছে। অনেকে শুধু পণ্ডিত নামটিই শুনেছেন। কেউ শুনেছেন পণ্ডিত মালদহের লোক। আবার কেউ জানেন পণ্ডিত ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদ ও ঝাড়খণ্ড— দু’জায়গার শ্রমিকরাই মোচপোলে কেরামতের বাজি কারখানায় কাজ করতে এসে বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন। পণ্ডিতও ওই দু’টি জায়গার কোনও একটির বাসিন্দা বলেই শুনেছেন গ্রামের লোকজন।

গ্রাম সূত্রের খবর, গ্রামে যাঁদের ব্যাঙ্কে মোটামুটি ভাল টাকা থাকে, তাঁদের কাছে নগদ জমা রেখে পণ্ডিতের কাছে অনলাইনে বারুদ কিংবা রাসায়নিকের বরাত পাঠাতেন কেরামতেরা। প্রকাশ্যে বাজির ব্যবসা করেন, এমন লোকজনের সঙ্গে সুদের কারবারের ব্যবসা করতেন জিরাট। সেই সুদের ব্যবসার টাকা বারুদের ব্যবসায় খাটাতেন তিনি। সেই টাকাই পণ্ডিতের থেকে বারুদ ও রাসায়নিক সংগ্রহে কাজে লাগানো হত। এমনকি, অনেক সময়ে চালান ছাড়াই পণ্ডিত মালপত্র পাঠাতেন বলেও খবর।

জিরাট আবার অনলাইনে মুর্শিদাবাদে নিজের পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতেন। কারণ, অতীতে বিস্ফোরণ সংক্রান্ত মামলায় জড়িয়ে দীর্ঘদিন মুর্শিদাবাদ ছাড়া ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন মুর্শিদাবাদে জেলবন্দিও ছিলেন তিনি। তাঁর দাদাও সেখানেই একটি জেলে বন্দি। অভিযোগ, জেল থেকেই গ্রামের লোকজনকে ফোন করে জিরাট ও তাঁর ব্যবসার খবরাখবর রাখতেন জিরাটের দাদা। বিস্ফোরণের পরে মুর্শিদাবাদের জেল থেকে কোনও কোনও বাসিন্দার কাছে জিরাটের খবর জানতে ফোন আসে বলেও জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement