দশমীতে শহরের কোন কোন পুজো দেখবেন, জেনে নিন আনন্দবাজার অনলাইনে। ছবি: ফেসবুক।
শহর কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতায় নয় নয় করে কয়েক হাজার পুজো। প্রতিটি নিজস্বতায় অনন্য। তবে সবগুলি ঘুরে দেখতে গেলে গোটা দশেক দুর্গাপুজো লাগবে। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য আনন্দবাজার অনলাইন প্রতি দিন বাছাই ছ’টি পুজো সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকাদের অবহিত করছে। পুজো দেখতে গিয়ে যে যে প্রশ্ন আপনার মনে তৈরি হবে, তার জবাব রইল এই নির্দেশিকায়। সকলের পুজো সর্বাঙ্গসুন্দর হোক।
দমদম পার্ক ভারতচক্র ক্লাব (উত্তর কলকাতা)
কী দেখবেন
থিম ‘ভ্রান্তি’। নানা রঙের পুতুল দিয়ে সাজানো মণ্ডপ। খড়ের ঘরে বসেছে প্রতিমা।
কেন দেখবেন
দমদম পার্কে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার সবচেয়ে ভাল দিক— এক দর্শনে অনেক পুজো। পাশের গলিতেই দমদম পার্ক তরুণ সঙ্ঘের মণ্ডপ। বাজার ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলেই তরুণদল।
কোথায় দেখবেন
যশোহর রোডে দমদম পার্ক মোড়ের কাছে।
কী ভাবে যাবেন
মেট্রোয় বেলগাছিয়া স্টেশনে নামুন। বিকেল ৩টের মধ্যে গেলে সেখান থেকে বাঙুরের অটো। নইলে বাসে দমদম পার্ক স্টপে নামুন। বাস স্টপ থেকে মিনিট দুয়েকের হাঁটা।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
দমদম পার্কে গাড়ি নিয়ে ঢোকার উপায় নেই। ফলে যশোহর রোডের উপরেই নেমে পড়তে হবে।
কোথায় খাবেন
পদ্মা সুইটসের শিঙাড়া আর রসমালাই চেখে দেখুন। মামস্ কিচেনে স্যান্ডউইচ থেকে চিলি চিকেন, নানা স্বাদের খাবার পাবেন।
কী ভাবে ফিরবেন
দমদম পার্কের ভিতরে অনেকগুলি পুজো। দেখতে দেখতে ভিআইপি রোড পর্যন্ত হেঁটে চলে যান। সেখান থেকে যে কোনও দিকের বাস পেয়ে যাবেন।
চালতাবাগান (উত্তর কলকাতা)
কী দেখবেন
থিম ‘অজানাকে জানা’। গ্রাম বাংলার নানা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপের সাজে। প্রতিমার রূপে চমক।
কেন দেখবেন
দশমীর দিন চালতাবাগানের পুজোয় ঠাকুর বরণ করতে আসেন টলিপাড়ার সেরা সুন্দরীরা। সময় মতো সেখানে পৌঁছলে তারকাদের সিঁদুরখেলা দেখা যাবে। কপালে থাকলে তাঁদের ঢাক বাজাতেও দেখে ফেলতে পারেন।
কোথায় দেখবেন
মানিকতলা মোড়ের কাছেই। মোড় পেরিয়ে আমহার্স্ট স্ট্রিটে ঢুকেই মণ্ডপ।
কী ভাবে যাবেন
মানিকতলা থেকে গিরিশ পার্কের দিকে যেতে বাঁ’হাতে পড়বে মণ্ডপ। লোহাপট্টির কাছে রাস্তার উপর। মেট্রোয় গেলে নামতে হবে গিরিশ পার্ক স্টেশনে। সেখান থেকে বাস বা অটো।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
বড় রাস্তার উপরেই পুজো। ফলে আশপাশে গাড়ি রাখার জায়গা নেই। তবে মানিকতলা বাজার ছাড়িয়ে গলির ভিতরে গাড়ি রাখার জায়গা পেলেও পেতে পারেন।
কোথায় খাবেন
মণ্ডপের ঠিক উল্টোদিকেই গাঙ্গুরাম’স। পাশেই চঞ্চলা। সেখানেও কচুরি-মিষ্টি খেতে পারেন।
কী ভাবে ফিরবেন
আমহার্স্ট স্ট্রিট-বিবেকানন্দ রোডের মোড় থেকে গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশন যাওয়ার বাস মিলবে। নইলে মানিকতলা মোড়ে গিয়ে বাস ধরতে পারেন।
শোভাবাজার রাজবাড়ি (উত্তর কলকাতা)
কী দেখবেন
বাড়ির পুজো। ঐতিহাসিক ঠাকুরদালান।
কেন দেখবেন
শত শত বছরের পুরনো পুজো। কলকাতায় দুর্গাপুজোর চল শুরুর ইতিহাসে এই বাড়ির বিশেষ অবদান আছে। শোনা যায়, পলাশির যুদ্ধের পরের বছর লর্ড ক্লাইভও গিয়েছিলেন এই পুজোয়।
কোথায় দেখবেন
শোভাবাজার মোড় থেকে খুব কাছে।
কী ভাবে যাবেন
মেট্রোয় শোভাবাজার স্টেশনে নামবেন। একটু পিছন দিকে হেঁটে গিয়ে ঢুকতে হবে জয়পুরিয়া কলেজের গলিতে। সেখানেই শোভাবাজার রাজবাড়ি।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
উত্তর কলকাতার সরু গলিতে পুজো হয়। গাড়ি রাখার জায়গার খুব অভাব। তবে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ধারে কোনও গলিতে গাড়ি রাখার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
কোথায় খাবেন
কাছেই চিত্তরঞ্জনের বহু প্রাচীন মিষ্টির দোকান। সেখানকার রসগোল্লা বিখ্যাত। আছে মিত্র ক্যাফে, অ্যালেন্স কিচেন। চপ-কাটলেট খেতে পারেন।
কী ভাবে ফিরবেন
শোভাবাজারে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে এলে সব দিকে যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। আর মেট্রো তো আছেই।
মুদিয়ালি ক্লাব (দক্ষিণ কলকাতা)
কী দেখবেন
সাবেক মাতৃমূর্তি। কাঠের বাঁশি, লোহার পাত আর হরেক রকমের আলো দিয়ে মণ্ডপের অন্দর-বাহির সাজানো হয়েছে।
কেন দেখবেন
থিমের লড়াইয়ে শামিল হতে চায় না এই পুজো। জাঁকজমকপূর্ণ মণ্ডপ, ঝাড়বাতি, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা আর মা দুর্গার সাবেক মূর্তি।
কোথায় দেখবেন
সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের গায়েই।
কী ভাবে যাবেন
মেট্রোয় এলে নামতে হবে রবীন্দ্র সরোবরে। বাসেও যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে নামতে হবে মুদিয়ালিতে। তার পর সাদার্ন অ্যাভিনিউ।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
মণ্ডপের কাছে পার্কিংয়ের কোনও জায়গা নেই। গাড়ি কিংবা বাইকে করে এলে পার্কিংয়ের জায়গা পাওয়া দুষ্কর।
কোথায় খাবেন বিজলি গ্রিল, গ্রাব ক্লাব, সানফায়ার কোস্টাল কাফে, প্যারাডাইস বিরিয়ানি ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক ক্যাফে।
কী ভাবে ফিরবেন
মেট্রো ধরলে কাছেপিঠে বা দূরের যে কোনও পুজোয় যাওয়া সম্ভব। মুদিয়ালির ঠাকুর দেখে কাছাকাছি শিবমন্দিরের পুজো দেখতে পারেন। মনে করলে হেঁটে চলে যেতে পারেন দক্ষিণ কলকাতার অন্য বড় পুজোয়।
নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ (দক্ষিণ কলকাতা)
কী দেখবেন
থিম ‘হৃদয়পুর’ নামক উদ্বাস্তু কলোনি।
কেন দেখবেন
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো হিসাবেই মূল খ্যাতি। বর্তমানে দায়িত্বে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। উদ্বাস্তু শিবির থেকে কী ভাবে উন্নয়নশীল এক জনপদে পরিণত হয়েছে নাকতলা, সেই ইতিহাসই এ বারের থিম।
কোথায় দেখবেন
নাকতলার নেতাজি সুভাষ রোডে।
কী ভাবে যাবেন
মাস্টারদা সূর্য সেন মেট্রো স্টেশনে নেমে একটু হেঁটে গেলেই নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। টালিগঞ্জ থেকে নেতাজি সুভাষ রোড ধরে বাঁশদ্রোণীর দিকে এগোলে বাঁ’হাতে গলির ভিতরে মণ্ডপ।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
দক্ষিণের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা বলে নেতাজি সুভাষ রোডের এই পুজোয় গাড়ি রাখার জায়গা নেই। বাঁশদ্রোণীর অলিগলির ভিতরে গাড়ি রেখে হেঁটে যেতে হবে।
কোথায় খাবেন
এলাকায় একাধিক নামকরা খাবারের দোকান রয়েছে। আজাদ হিন্দ ধাবা, আমিনিয়া, অওধের বিরিয়ানি, আপনজনের ফিশফ্রাই, বলরাম মল্লিকের মিষ্টির দোকান।
কী ভাবে ফিরবেন
মেট্রোয় ফেরা যেতে পারে। বা অটো ধরে টালিগঞ্জ এলাকার একাধিক পুজো দেখা যেতে পারে। বাসে বা মেট্রোয় চলে যাওয়া যেতে পারে গড়িয়ার দিকেও।
৯৫ পল্লি যোধপুর পার্ক (দক্ষিণ কলকাতা)
কী দেখবেন
থিম ‘বাতিল নয়, ব্যবহার’।
কেন দেখবেন
যা কিছু বাতিল হয়ে যায়, তার সব কিছু ফেলে দেওয়ার নয়। বরং সেগুলি ব্যবহার করেই মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা যায়। এই ধরণীকে আবর্জনায় না ভরিয়ে নতুন পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সেই সব দিয়েই করা যায় নতুন কিছু। নতুন ভাবনা কাজে লাগিয়ে রাখা সরিয়ে ফেলা যায় দূষণের মতো অসুরকেও।
কোথায় দেখবেন
যোধপুর পার্ক পেট্রল পাম্প থেকে ভিতরে ঢুকে। যোধপুর পার্ক বাজারের অদূরে।
কী ভাবে যাবেন
প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড থেকে লর্ডসের মোড়ের দিকে এগোলে বাঁ’হাতে একটু ভিতরে এই পুজো। বাইপাসের দিক থেকে আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর ধরে এলেও এই পুজোর হদিস মিলবে।
কোথায় গাড়ি রাখবেন
রহিম ওস্তাগার রোডের এই পুজোর কাছাকাছি কোনও গাড়ি রাখার জায়গা নেই। অলি-গলিতে গাড়ি বা বাইক রাখা যেতে পারে। তবে নিজ দায়িত্বে।
কোথায় খাবেন
মণ্ডপের কাছেই তন্দুর পার্ক, আবার বৈঠক, ব্লু মাগ ক্যাফে, আরসালান, ৬ বালিগঞ্জ প্লেস থালি, জিমিজ় কিচেন, পাবরাই (আইসক্রিম ওনলি)।
কী ভাবে ফিরবেন
ঢাকুরিয়া পৌঁছে গড়িয়াহাটের একডালিয়া এভারগ্রিন, সিংহী পার্কের পুজো দেখে নিতে পারেন। মেট্রোয় ফিরতে চাইলে সবচেয়ে কাছের স্টেশন রবীন্দ্র সরোবর। চাইলে ট্রেনও ধরতে পারেন ঢাকুরিয়া স্টেশন থেকে।