ফাইল চিত্র।
রাজনৈতিক সমীকরণে বহু ক্ষেত্রে তাঁদের এক মঞ্চে হাজির করানো যায় না। ভারতীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদে তাঁদের একসঙ্গে পাওয়া গেলেও, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে দেখা যায়। কিন্তু সেই প্রতিপক্ষকে এ বার পুজোয় নিজেদের মঞ্চে হাজির করতে চলেছে বেলেঘাটার একটি শারদোৎসব কমিটি। পুজোর ক’দিন ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘে এক মঞ্চে হাজির হবেন মোদী, মমতা, রাহুল গাঁধী। সশরীরে নয়, তাঁদের কাঠের পুতুলের মূর্তি দিয়ে সাজানো হবে দেবী দুর্গার মণ্ডপ। ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘের এ বারের পুজোর থিম—কাঠের পুতুলের জীবন। শিল্পী সমর সাহার ভাবনায় সেজে উঠছে এই পুজো মণ্ডপ। প্রায় ২ হাজার কাঠের পুতুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ।
কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে পূর্ব বর্ধমান জেলার অগ্রদ্বীপের নতুনগ্রাম। সেখানেই কারু শিল্পীদের বাস। যাঁরা নিজেরা বলেন ‘দারু শিল্প’। ‘দারু’ অর্থে কাঠ।
কাঠের তৈরি রংবেরঙের পুতুল তৈরিতে বিশ্বখ্যাত এই গ্রামটি। গ্রামের ৫০টি পরিবার শিল্পী। তাঁরাই বাঁচিয়ে রেখেছেন দারুশিল্পকে। সেই দারুশিল্পীরা সাজিয়ে তুলেছেন ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সংঘের পুজো। গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি বিধি নিষেধের কারণেই গোটা দেশে মেলা বন্ধ। ট্রেনে দেখা নেই ফেরিওয়ালাদের। আয়ের সব পথ থেকে বিচ্ছিন্ন নতুনগ্রাম। এই অবস্থার কথা জানতে পেরে পুজো কমিটির কর্তারা নতুনগ্রামে গিয়ে দারু শিল্পীদের পুজোর মণ্ডপ সাজানোর প্রস্তাব দেন। এক কথায় রাজি হয়ে যান শিল্পীরা। দারু শিল্পীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের কাঠের মূর্তি দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর প্রস্তাব দেন পুজো উদ্যোক্তাদের। ভাবনায় সম্মতি দেন তাঁরা।
পৃথক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য তৈরি করা হচ্ছে পৃথক মঞ্চ। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহর সঙ্গে এক মঞ্চে থাকবেন সনিয়া গাঁধী ও রাহুল। তাদের মূর্তি গড়া হচ্ছে বক্তৃতা দেওয়ার আদলে। আবার রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে থাকবেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। সেই মঞ্চের সামনেই রাখা হচ্ছে বইয়ের সারি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থাকবেন একটি মঞ্চে, তার সামনে থাকবে পেট্রোল পাম্প ও রান্নার গ্যাস। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তির জন্য তৈরি হচ্ছে একটি পৃথক মঞ্চ। যেখানে তাঁর মূর্তির সঙ্গে থাকবে রাজ্য সরকারের সব উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা। শিল্পী সমর সাহা বলেন, ‘‘লকডাউনে কর্মহীন হয়ে যাওয়া শিল্পীদের হাতে কাজ ফিরিয়ে দিতেই আমরা এই থিম বেছে নিয়েছি। ওঁদের কাজের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের মূর্তি দিয়ে মণ্ডপ কী ভাবে সাজানো হবে, তাও ওঁরা পরিকল্পনা করেছেন। ঠাকুর দেখতে এলে দর্শকরা সব কিছু উপলব্ধি করতে পারবেন।’’ নতুনগ্রামের ২০টি পরিবার গত তিন মাসের পরিশ্রমে গড়ে তুলছেন এই পুজোর মঞ্চ। পারিশ্রমিক ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকা এই পরিবারগুলোর হাতে তুলে দেবেন পুজো উদ্যোক্তারা।