তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আদি বাড়ি বিহারে। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই পরিবার নিয়ে থাকেন কলকাতায়। দক্ষিণ কলকাতার আনন্দপুর থানা এলাকাতেই তাঁর বাড়ি। সেখানে কিছু জমিজমাও রয়েছে। এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত গুলজ়ার নামে। তবে তাঁর বাইক নথিভুক্ত করা অন্য নামে— আফরোজ় খান। কসবার তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুন করার ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’র নানা পরিচয়ের ধাঁধার এখন জবাব খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্তের উপর হামলার চেষ্টা করেন এক আততায়ী। যুবরাজ সিংহ নামে ওই আততায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ জানতে পারে আফরোজ়ের নাম। তবে যুবরাজের কাছে আবার তিনি ইকবাল নামে পরিচিত। পুলিশি জেরায় যুবরাজ জানিয়েছেন, কাউন্সিলরকে ‘ভয় দেখানো’র জন্য তাঁকে সুপারি দিয়েছিলেন আফরোজ়। তাঁর উপর খুন করার কোনও নির্দেশ ছিল না! খুন করার জন্য ছিল অন্য লোক! তাঁকেও ভাড়া করে বিহার থেকে আনেন আফরোজ়। যদিও ওই তথ্যগুলো কতটা ঠিক, তা নিয়ে সংশয়ে তদন্তকারীরা। তৃণমূল কাউন্সিলরের উপর হামলার নেপথ্যে আরও কেউ রয়েছেন কি না, খোঁজ চলছে।
ধৃত যুবরাজের কাছ থেকে আফরোজ় ওরফে গুলজ়ারের নাম জানার পরই তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করেন তদন্তকারীরা। কোনও এক সূত্রে তদন্তকারীদের হাতে চলে আসে ইকবালের একটি ছবি। আনন্দপুর থানা এলাকায় তিনি থাকেন এমন খবরও পান তদন্তকারীরা। এলাকায় গিয়ে ‘ইকবাল’ নামে খোঁজখবর শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু কেউই ‘ইকবাল’ নামের কাউকে চিনতে পারেননি। তবে ছবি দেখে প্রায় সকলেই তাঁকে ‘গুলজ়ার’ বলে চিনে ফেলেন। তদন্তকারীদের একটি সূত্রে খবর, স্থানীয়েরা কেউই স্পষ্ট করে বলতে পারেননি কী কাজ করতেন আফরোজ়। তবে সবাই জানান, ব্যবসা করেন তিনি। কিসের ব্যবসা? কেউ জানিয়েছেন, বালি-সিমেন্টের সিন্ডিকেটে যুক্ত। কেউ আবার জানান, চপ্পল তৈরির বাতিল দানা কিনে ব্যবসা করতেন। কারও কাছে তিনি আবার আলু ব্যবসায়ী! পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আফরোজ়ের অপরাধের কোনও অতীত নেই। এমনকি, স্থানীয় কোনও অপরাধ গ্যাংয়ের সঙ্গেও জড়িত নন তিনি। কলকাতার বুকেই তাঁর আরও একটি বাড়িরও খোঁজ মিলেছে। ইতিমধ্যেই সেখানে হানা দিয়েছে তদন্তকারীদের একটি দল।
তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পারে, এই ঘটনায় জড়িয়ে রয়েছেন এক ট্যাক্সিচালক। আহমেদ খান নামে ওই ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, ওই ট্যাক্সিচালককে ঠিক করেছিলেন আফরোজ়। তাঁর ট্যাক্সিতেই বিহার থেকে আসা দুই ‘শুটার’কে নিয়ে লেকটাউনের একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। শুক্রবার সেখান থেকে বেরিয়েই কসবায় যায় আততায়ীরা। এমনকি, যুবরাজের থেকে যে নাইন এমএম পিস্তলটি পেয়েছে পুলিশ, সেটিও আফরোজ়ই দিয়েছিলেন।