Kasba Attempt to Murder Case

‘সুশান্ত ঘোষ গুন্ডা হ্যায়’! কাউন্সিলরকে খুন করার বরাত কেন? ধরা পড়ে কী কী বললেন ‘চক্রী’ আফরোজ়

ধৃত বন্দুকবাজই পুলিশকে আফরোজ়ের নাম জানিয়েছিলেন। তখন থেকেই তাঁর গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু করেন তদন্তকারীরা। সেই আফরোজ় শনিবার ধরা পড়তেই খুনের চেষ্টার নেপথ্যে কী কারণ তা খানিক স্পষ্ট হল!

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
গলসি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ২১:৫৪
Why did he plan to killed TMC Councilor Sushanta Ghosh, reveal by accused

(বাঁ দিকে) ধৃত আফরোজ় খান এবং তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

কসবার তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন তিনিই। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সে কথা স্বীকার করলেন আফরোজ় খান ওরফে গুলজ়ার। শনিবার এ রাজ্য থেকে বাইকে চেপে বিহারে পালানোর সময় পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। পরে কলকাতা পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে কসবার বাসিন্দা আফরোজ়কে। কিন্তু কেন তৃণমূল কাউন্সিলরকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন আফরোজ়? গলসি থানা থেকে বেরোনোর সময় তিনি বলেন, ‘‘সুশান্ত ঘোষ গুন্ডা হ্যায়! মেরা জায়গা দখল কিয়া হ্যায় তো মারা হ্যায় (আমার জায়গা দখল করেছিল, তাই মেরেছি)।’’

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়ির সামনেই সুশান্তকে গুলি করে খুনের চেষ্টা করেন এক তরুণ। একেবারে সামনে থেকে গুলি ছোড়ার চেষ্টা করেন তিনি। তবে বন্দুক কাজ করেনি। সুশান্ত এবং তাঁর অনুগামীরাই ধরে ফেলেন আততায়ীকে। ধৃতের নাম যুবরাজ সিংহ। বিহারের বাসিন্দা যুবরাজকে জেরা করেই পুলিশ জানতে পারে, স্থানীয় এক ব্যক্তিই তাঁকে খুন করার বরাত দিয়েছিলেন। বিহার থেকে ভাড়া করা হয়েছিল ওই ‘শুটার’কে। যুবরাজই জানান আফরোজ়ের নাম। তখন থেকেই তাঁর গতিবিধির উপর নজরদারি শুরু করেন তদন্তকারীরা। কিন্তু কেন সুশান্তকে খুনের পরিকল্পনা করেছিলেন, তা স্পষ্ট ছিল না পুলিশের কাছে। শনিবার আফরোজ় ধরা পড়তেই খুনের চেষ্টার নেপথ্যে কী কারণ তা খানিক পরিষ্কার হয়েছে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, দক্ষিণ কলকাতার রুবি হাসপাতাল লাগোয়া আনন্দপুর এলাকার গুলশান কলোনিতে থাকেন আফরোজ়। সেখানে তাঁর জমি-বাড়ি রয়েছে। সেই জমি নিয়ে বিবাদ ছিল স্থানীয় এক জনের সঙ্গে। তিনি পেশায় প্রোমোটার। জেরায় পুলিশকে আফরোজ় জানিয়েছেন, ওই প্রোমোটার সুশান্তের অনুগামী। কাউন্সিলরের ‘ভয় দেখিয়ে’ সম্প্রতি তাঁর জমি দখল করে ফ্ল্যাট বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। তা মেনে নিতে পারেননি আফরোজ়। তখনই সুশান্তকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জেরায় পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি। এমনটাই খবর পুলিশ সূত্রে।

শুক্রবার রাত থেকেই আফরোজ়ের গতিবিধি ছিল কলকাতা পুলিশের আতশকাচের নীচে। ‘পলাতক’ আফরোজ়কে খুঁজতে চারদিকে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। বিভিন্ন জায়গার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু হয়। শনিবার হাওড়া পার হওয়ার সময়ই টোল প্লাজ়ার সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে আফরোজ়। দেখা যায় বাইক নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন তিনি। আফরোজ়ের বাইকের নম্বর খুঁজে বার করে বর্ধমান পুলিশকে সতর্ক করে কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী দল। বর্ধমান রেঞ্জের ডিআইজি ও পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে বার্তা পাঠানো হয়। সেই সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার সায়ক দাস ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কে নাকা তল্লাশি করার নির্দেশ দেন থানাগুলিকে।

নাকা চেকিংয়ের সময় গলসি থানার উড়োচটিতে আফরোজ়ের বাইকটি চিহ্নিত করে পুলিশ। তখনই বাইকটি থামানো হয়। আরোহীকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জানা যায়, বাইক নিয়ে আফরোজ় বিহারের জামুইয়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। সেখানেই তাঁর বাড়ি। এর পর তাঁকে পাকড়াও করে নিয়ে যাওয়া হয় গলসি থানায়। বাজেয়াপ্ত করা হয় বাইকটিও। খবর দেওয়া হয় লালবাজারে। সেখান থেকেই কলকাতা পুলিশের একটি দল গলসিতে আসে। ধৃতকে নিয়ে তারা ফের কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়।

আরও পড়ুন
Advertisement