আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
সদ্য খবরটা পেয়েছি। প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জায়গায় এখনও নিজেকে সে ভাবে দাঁড় করাতে পারিনি। ওঁর সঙ্গে তো আমার আজকের সম্পর্ক নয়। দীর্ঘ দিনের পারিবারিক সম্পর্ক আমার আর আমার স্বামী রানার সঙ্গে। এক জন তুখোড় রাজনীতিকের মৃত্যু যেমন শূন্যতা তৈরি করে, তেমনই বন্ধু হারানোটাও ব্যক্তিগত জীবনে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি করে দেয়, যা পূরণ হওয়া মুশকিল। সুব্রতদা আমার দেখা সবচেয়ে গোছানো, সবচেয়ে দক্ষ রাজনীতিবিদদের অন্যতম। যে কাজই ওঁকে দেওয়া হতো, ঠিক সুষ্ঠু ভাবে করে ফেলার ক্ষমতা রাখতেন।
কলকাতার মেয়র থাকাকালীন ভারী সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছিলেন আমাদের শহরটাকে। নিজের দলগত আদর্শ আর প্রশাসনিক দায়িত্ব গুলিয়ে না ফেলে যথাস্থানে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়াটাও ওঁর থেকে শেখার মতো ছিল। স্পষ্টবাদী এবং শিক্ষিত রাজনীতিকের এই ধারাটাও বোধ হয় ওঁর সঙ্গেই হারিয়ে গেল।
উৎসবের মধ্যে এমন দুঃসংবাদ পেয়ে আরও একটা উৎসবের কথা অদ্ভুত ভাবে মনে পড়ছে। এ বার দুর্গা পুজোয় ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার। কোনও রকম আগাম কথাবার্তা ছাড়াই। হঠাৎ মনে হল, এক বার একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোয় যাই। চলেও গেলাম আমি আর রানা। দেখা হল বহু দিন বাদে। খানিক গল্পগুজবও। আজ মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস গিয়েছিলাম!
রাজনীতিতে একই দলে কাজ করেছি। সেই সুবাদে কাছ থেকে দেখেছি, শিখেছি ওঁর কাজ করার ধরন। জেনেছি এই দুনিয়ার খুঁটিনাটি। পারিবারিক যোগাযোগও ছিলই বরাবর। তবে ওঁর আরও একটা দিক আমার দেখা। সে দিকটা হয়তো অনেকেরই অজানা। সুব্রতর সেলুলয়েড-সফর। অনেকেই কিন্তু জানেন না, প্রসেনজিৎ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে সুব্রতরই প্রথম ছোটপর্দায় অভিষেক হয়েছিল। দূরদর্শনে ওঁর প্রথম ধারাবাহিক। নাম ‘চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালস’। তাতে ওঁর বিপরীতে নায়িকা ছিলাম আমিই!
আমার জীবনটাকে তিন দিক থেকে ঘিরে রাখা একটা মানুষ। তিনিই আজ 'নেই' হয়ে গেলেন!