প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে বুধবার বিচারপতি জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি পার্থ কর্মকারকেও। তাঁদের বুধবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতরে যেতে বলেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
বুধবার হাই কোর্টে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই। ২০১৪ সালের টেট দুর্নীতি সংক্রান্ত ওই রিপোর্ট দেখার পরেই ওই নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এই রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ তদন্তে সহযোগিতা না করলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের স্বাধীনতাও সিবিআইকে দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ১৮ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, প্রাথমিকের অনেক মামলা এই আদালতে শুনানি হয়েছে। পর্ষদের বর্তমান সভাপতি-সহ অন্য আধিকারিকরা নতুন প্রিন্ট করা কপিকে ‘ডিজিটাইজড কপি’ বলে দাবি করেছেন। তাই আদালত মনে করছে, পর্ষদ সভাপতি এবং সেক্রেটারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এমনকি, সিবিআই মনে করলে পর্ষদের যে কোনও আধিকারিককে প্রয়োজনে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র বা ওএমআরশিট দেখে নম্বর দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি’ নামের এক সংস্থাকে। সেই সংস্থার কর্তা কৌশিক মাজিকে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। এর পর বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে টেট পরীক্ষার খাতা সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল।
ওই মামলায় আবেদনকারীর অভিযোগ ছিল, ওএমআর শিটের ‘ডিজিটাইজড ডেটা’য় অনেক ভুল রয়েছে। আদালতে যে ওএমআর শিটের তথ্য বলে যে নথি পেশ করা হয়েছে, তা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ ওএমআর শিটের ডিজিটাইজড ডেটা বলতে যা বোঝায়, তা আসলে ওএমআর শিটের স্ক্যান করা কপি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পর্ষদ আদালতে যা পেশ করেছে তা টাইপ করা তথ্য। আর সেই তথ্যে প্রশ্ন-উত্তরের অনেক বিকল্পেও ভুল রয়েছে।
মামলাকারীর এই বক্তব্য শোনার পরই তদন্তকারী সিবিআইকে প্রশ্ন করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানতে চান, কী ভাবে এই ফাঁকি থেকে গেল? এমনকি, অভিযুক্তদের যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করার দরকার ছিল, তা-ও সিবিআই করেনি বলে অভিযোগ করেন বিচারপতি। বুধবার এ ব্যাপারে সিবিআইকে ভর্ৎসনা করেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘সিবিআই তো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নই করেনি। কী প্রশ্ন করবে সেটাও কি আমাকে বলে দিতে হবে? আপনাদের কাজ কি মানুষকে বোকা বানানো?... এর চেয়ে উলুবেড়িয়া থানাকে কেসটা দিলে ভাল হত!’’
সেই ভর্ৎসনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই টেট পরীক্ষার ওএমআর শিট দেখার দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্তা কৌশিককে নিজাম প্যালেসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। এ বার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তলব করার নির্দেশ দিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি এবং ডেপুটি সেক্রেটারিকে।