কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুপ্রিয়া পটেল। — ফাইল চিত্র।
বিরোধীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আগেই। এ বার জাতগণনার দাবি উঠল বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএর অন্দর থেকে। বিজেপির সহযোগী আপনা দল (এস) নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া পটেল মঙ্গলবার বলেন, ‘‘দেশের প্রতিটি জাতির গণনা করে অবিলম্বে সেই তথ্য প্রকাশ করা উচিত।’’
বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকারের জাতগণনার উদ্যোগের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোনও রাজ্য বা দলের নাম না-করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘জাতপাতের ভিত্তিতে দেশে বিভাজনের চেষ্টা’র অভিযোগ তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য অনুপ্রিয়ার মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন। তাঁদের মতে হিন্দি বলয়ের রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং দক্ষিণ ভারতের তেলঙ্গানা-সহ পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে এর ফলে অস্বস্তি বাড়তে পারে বিজেপি শিবিরে।
কংগ্রেসের তরফে ইতিমধ্যেই ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে জাতগণনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, পাঁচ মাস আগে কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়েই প্রথম জাতগণনার দাবি তুলেছিলেন দলের নেতা রাহুল গান্ধী। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের শাজাপুরে জনসভায় রাহুল বলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পরেই, আমরা প্রথম কাজটি যা করব তা হল, দেশের ওবিসিদের সঠিক সংখ্যা জানার জন্য একটি জাতভিত্তিক গণনা করা। কারণ তাঁদের সঠিক সংখ্যা কেউ জানেন না।’’
বর্তমানে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তফশিলি জাতির সংরক্ষণ ১৫ শতাংশ, তফশিলি জনজাতিভুক্তরা পান সাত শতাংশ সংরক্ষণ। ওবিসিরা পান ২৭ শতাংশ পর্যন্ত সংরক্ষণের সুবিধা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, ওবিসি-দের জন্য ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকলেও আসলে জনসংখ্যায় তাদের হার বেশি। আসল সংখ্যা প্রকাশ্যে এলে ওবিসি কোটায় আরও সংরক্ষণের দাবি উঠবে। তাতে উচ্চবর্ণ বা জেনারেল ক্যাটেগরি এবং ওবিসি, দু’দিক থেকেই চাপে পড়বে বিজেপি। জেডিইউ, আরজেডি-র পাশাপাশি এসপি-ও এই প্রশ্নে কংগ্রেসের পাশে থাকবে। সন্তুষ্ট হবে তামিলনাড়ুর ডিএমকের মতো ‘ইন্ডিয়া’র শরিকও। ভোট আর জোটের সেই ছক মেনেই রাহুলের ‘জিতনি আবাদি, উতনা হক’ (যে জনগোষ্ঠীর যত সংখ্যা, সংরক্ষণে তার তত অধিকার) স্লোগান।
এই পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের ওবিসি জনগোষ্ঠী কুর্মি সম্প্রদায়ের নেত্রী অনুপ্রিয়া ভোটের অঙ্ক কষেই জাতগণনার দাবি তুলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিহারে আরজেডি-জেডিইউ-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’ সরকার ইতিমধ্যেই জাতভিত্তিক সমীক্ষায় কাজ অনেকটাই করে ফেলেছে। আদালতের ছাড়পত্র পাওয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে অন্তর্বর্তী রিপোর্টও। জাতগণনার বিরোধীরা আদালতে আবেদন জানিয়েছিল, বিহার সরকারের এই পদক্ষেপ ‘বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিক’। এই পদক্ষেপ সংবিধানের মৌলিক অধিকার এবং ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের (সমতা ও সাম্যের অধিকার) পরিপন্থী। কিন্তু পটনা হাই কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।