(বাঁ দিক থেকে) ২০০০ সালে নিজের ১১ বছরের ছেলেকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা জামালের। শনিবার নিজের পরিবারকে হারানোর পর জামাল। ছবি: রয়টার্স।
আবার ২৩ বছর পরে খবরে এলেন তিনি। আবার ইজ়রায়েলি হামলায় পরিবার হারিয়ে। এবং বরাতজোরে নিজে প্রাণে বেঁচে গিয়ে! গাজ়ার বাসিন্দা জামাল আর-দুরার কাহিনী মঙ্গলবার উঠে এসেছে পশ্চিম এশিয়ার নানা সংবাদমাধ্যমে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের রকেট হানা এবং সীমান্ত পেরিয়ে হামলার পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে গাজ়ায় চলছে ইজ়রায়েলি সেনার হানা। বিমান থেকে টন টন বোমা ফেলার পাশাপাশি, ২৩ লক্ষ প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের আবাসভূমি ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের জনপদে চলছে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ। সেই হামলাতেই দুই ভাই, ভ্রাতৃবধূ এবং ভাইঝিকে হারিয়েছেন প্রৌঢ় জামাল।
২০০০ সালে গাজ়ায় ইজ়রায়েলি সেনার এমন হামলাই প্রাণ কেড়েছিল জামালের ১১ বছরের ছেলে মহম্মদ আল-দুরা এবং আরও কয়েক জন পরিজনের। হামাস-সহ কয়েকটি প্যালেস্তিনীয় সংগঠনের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা (সম্পূর্ণ অভ্যুত্থান)-র ‘জবাব’ দিতে গাজ়া, জেরুসালেম এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের অসামরিক জনবসতিতে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করেছিল ইজ়রায়েলি ফৌজ। পাশাপাশি, স্থলপথেও চলেছিল হামলা। নিরস্ত্র প্যালেস্তিনীয়রাও রেহাই পাননি।
সে সময় ইজ়রায়েলি ফৌজের গুলিতে প্রাণ গিয়েছিল জামালের পুত্রের। ইজ়রায়েলি সেনার গুলিবর্ষণের মুখে পুত্রের প্রাণ বাঁচানোর জন্য জামালের সেই নিষ্ফল প্রচেষ্টার ছবি সে সময় প্যালেস্তিনীয় জনতার কাছে ‘দ্বিতীয় ইন্তিফাদা’র প্রতীক হয়ে গিয়েছিল। ছবিতে দেখা গিয়েছিল, গুলি থেকে বাঁচতে পুত্রকে পাশে নিয়ে একটি কংক্রিটের ট্যাঙ্কের আড়াল খুঁজছেন জামাল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই ইজ়রায়েলি গুলিতে বাবার কোলেই ঢলে পড়েছিল মহম্মদ আল-দুরা।
এ বার অবশ্য সেই চেষ্টাটুকুরও সুযোগ পাননি তিনি। আকাশ থেকে নেমে এসেছিল ‘মৃত্যুদূত’। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বাহিনীর ছোড়া গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র। মঙ্গলবার গাজ়ার আল আকসা মসজিদ চত্বরে আশ্রয় নেওয়া জ়ামাল বলেন, ‘‘শুধু আমার দুই ভাই, ভ্রাতৃবধূ আর ভাইঝি নয়, ক্ষেপণাস্ত্রে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে আমাদের পুরো পাড়ার অনেকগুলি পরিবার। মৃত্যু হয়েছে বহু শিশুর।’’ ঘটনাচক্রে সে সময় বাড়িতে ছিলেন না তিনি। মঙ্গলবার যুদ্ধের একাদশ দিনে গাজ়ায় নিহত সাধারণ প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের সংখ্যা ৩,০০০ পেরিয়েছে। প্যালেস্তনীয় স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে নিহতদের এক তৃতীয়াংশই শিশু।