(বাঁ দিকে) রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ফের রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়ালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বুধবার সন্ধ্যায় রাজভবন থেকে ‘রাজ্যপালের রিপোর্ট কার্ড’ নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যকে পদ থেকে সরানো নিয়ে আবার প্রকাশ্যে আসে রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত। সেই ঘটনায় যে রাজ্যপাল তথা আচার্যের মনে ‘ক্ষোভ পুঞ্জীভুত’ হয়েছে, তা এই বিবৃতিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
রাজভবনের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের বেআইনি আদেশে যে সকল উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ স্তব্ধ করে করে রেখেছেন, আচার্য তাঁদের সতর্ক করছেন।’’ পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ‘ক্ষমতা কুক্ষিগত’ করতে চাইছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে। রাজভবনের বিবৃতিতে সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের আদেশের কথা উল্লেখ করে আচার্যের ক্ষমতা ‘স্মরণ’ করানো হয়েছে। বলা হয়েছে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে, স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে আচার্যের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পরিচালিত হবে ইউজিসি-র নিয়মাবলি অনুযায়ী। কোনও রাজ্য সরকারের সঙ্গে যদি ইউজিসির নিয়মের সঙ্গে মতানৈক্য তৈরি হয়, তা হলে ইউজিসির নিয়মই কার্যকরী হবে। রাজভবনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উপাচার্যেরা যে সব নির্দেশ দিয়েছিলেন, আচার্য তা ক্ষমতাবলে রদ করে দিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অগস্টে রজতকিশোর দে-কে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী উপাচার্যের পদে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল তথা আচার্য। তার পর থেকে তিনি ওই পদেই বহাল ছিলেন। কিন্তু রবিবার রাজ্যপালের তরফে একটি চিঠি পাঠিয়ে রজতকিশোরকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগের ন’মাসের মাথায় তাঁকে পদ থেকে সরানো হয়। কিন্তু কেন তাঁকে পদ থেকে সরানো হল, তা ওই চিঠি থেকে স্পষ্ট নয়। যদিও তৃণমূলের দাবি, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র সাম্প্রতিক কনভেনশনের জেরেই রজতকিশোরকে সরানো হয়েছে।
সম্প্রতি তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র সভা বসেছিল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সভাপতি হিসাবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ঘটনাচক্রে, সেই সভার পরে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে অপসারিত হন রজতকিশোর। তার পরেই সোমবার রাজ্যপালের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ‘এবিপি আনন্দ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রাত্য বলেন, ‘‘এই লোকটার (রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস) পাগলামি এবং বোকামি দেখতে দেখতে রাজ্যবাসী ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। দু’দিন আগে উত্তরবঙ্গে আমাদের রাজ্য অধ্যাপক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র কনভেনশন হয়। সেখানে কার্যকরী উপাচার্য উপস্থিতও ছিলেন না। কিন্তু রাজ্যপালের গোসা হয়েছে। সেই কারণেই নির্বাচনী বিধিনিষেধ না মেনে এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়কে উড়িয়ে দিয়ে রবিবার মধ্যরাতে ওই উপাচার্যকে চিঠি পাঠিয়ে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।’’ শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্য সম্ভবত ভাল ভাবে নেননি রাজ্যপাল। তাই রাজভবন থেকে বিবৃতি জারি করে, আচার্যের ‘ক্ষমতা’ বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।